রংপুরে বেশি দামে বিএডিসির বীজ-আলু বিক্রি

 

রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরে বিএডিসি অনুমোদিত ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বীজ-আলু বিক্রি করছেন। এদিকে একাধিক ডিলার জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে অধিক খরচে বীজ আলু সংগ্রহ করায় তারা নির্ধারিত দামে বিক্রি করে পোষাতে পারছেন না, তাই দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিং জোরদারের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় বীজের চাহিদা হচ্ছে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ জেলায় গত বছরের চেয়ে এ বছর বীজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। এজন্য বীজ আলুর বরাদ্দ হচ্ছে এক হাজার ১০০ মেট্রিক টন। আলুর জাতগুলো হচ্ছে ডায়মন্ড, ক্যার্ডিনাল, এসটারিস, ক্যারেজ এবং গ্রানুলা। উল্লিখিত বীজ আলু প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে ১০ নভেম্বর থেকে জেলার নির্ধারিত ২০৪ জন ডিলার এবং কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হয়। ডিলারদের ৩০ টাকা সের দরে বীজ বিক্রি করতে বলা হয়। কিন্তু ডিলাররা নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বেশি দামে বীজ-আলু বিক্রি করছেন।

রংপুর মহানগরীর সিটি করপোরেশন বাজার, লালবাগ এবং মাহিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত বিএডিসি অনুমোদিত ডিলার পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে আলুচাষিদের উপচেপড়া ভিড়। এ সুযোগে ডিলাররা নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বীজ-আলু বিক্রি করছেন। কৃষকরাও বাড়তি দামে তা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের আলুচাষি ইয়াকুব আলী জানান, এ বছর পাঁচ দোন জমিতে (১২০ শতক) এসটারিস জাতের আলু রোপণ করেছেন। এজন্য বিএডিসির বীজ-আলু দরকার হয়েছে (এ গ্রেড) ১৭ বস্তা অর্থাৎ ১৭ মণ। প্রতি এক মণের বস্তা ৩০ টাকা কেজি করে এক হাজার ২০০ টাকা হলেও তিনি প্রতি বস্তা কিনেছেন এক হাজার ৭২০ টাকায়। ফলে বস্তাপ্রতি তাকে অতিরিক্ত ৫২০ টাকা দিতে হয়েছে। আর ১৭ মণ আলু কিনতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে আট হাজার ৮৪০ টাকা।

পীরগাছা উপজেলার আলুচাষি লিটন সরকার জানান, গত বছর আলুতে ভালো লাভ হওয়ায় এ বছর আলুর চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আলু বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিএডিসির বীজ-আলু মানসম্পন্ন, তাই অন্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বীজের চেয়ে ওই আলুর চাহিদা বেশি। এই চাহিদাকে পুঁজি করে অনেক বিএডিসি ডিলার ‘এ’ গ্রেডের আলু বীজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। সদরের আলুচাষি মোকলেস জানান, ইচ্ছে ছিল কিছু বেশি জমিতে আলু করার কিন্তু বীজের মূল্য বেশি হওয়ায় অল্প জমিতে আলু লাগাবো।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এএসএম হাসান সরোওয়ার জানান, বিভিন্ন ডিলার পয়েন্টে বীজ-আলু নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ডিলারভেদে একই বীজের দামের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। বিএডিসির বীজের পাশাপাশি বাজারে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আলুবীজের গায়ে কোনো মূল্য লেখা না থাকায় চাষিরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

বিএডিসির উপ-সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রত্যেক ডিলারকে ৩.৮৮ মেট্রিক টন করে বীজ-আলু প্রদান করা হয়েছে। ৪০ কেজির আলুর বস্তায় প্রতি কেজির দাম ২৮ টাকা উল্লেখ করাসহ ডিলার পয়েন্টে ৩০ টাকা করে বিক্রির বিষয়ে লেখা রয়েছে। ডিলারদের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, বরাদ্দ করা আলুবীজ অনুমোদিত ডিলাররা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন না। তবে তিনি স্বীকার করেন, জেলার মোট বীজের চাহিদার শতকরা চার ভাগ বীজ-আলু উৎপাদন করে বিএডিসি।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০