নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। এ দিবসের উপহার হিসেবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও সরকার যৌথভাবে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপন করেছে। শনিবার (২০ জুন) শরণার্থী দিবসে এ আইসিইউ’র উদ্বোধন করা হয়।
১৮ শয্যার এই আইসিইউতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সবচেয়ে গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশি উভয়ের জন্য উন্মুক্ত এই আইসিইউতে জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ ১০টি আইসিইউ বেড ও ৮টি হাই ডিপেন্ডেন্সি বেড রয়েছে। এ রকম স্বাস্থ্যসুবিধা কক্সবাজারে এই প্রথম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য সাইমুম সারওয়ার কমল বলেন, “কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন এই আইসিইউ স্বাস্থ্যখাতে সর্বোচ্চ মানের সহায়তা ও সেবা নিশ্চিত করবে। কক্সবাজারের মানুষদের আর চিকিৎসার জন্য অন্য জেলায় যেতে হবে না। আমরা ইউএনএইচসিআর-কে ধন্যবাদ জানাই।”
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডা: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “এপ্রিল মাসের শুরুতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের নেতৃত্বে এবং জেলা প্রশাসন ও ইউএনএইচসিআর-এর সহযোগিতায় আমরা এই কাজ শুরু করেছিলাম। এর উদ্বোধনে আমরা খুবই আনন্দিত।”

যখন কক্সবাজার জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তখন মানবিক কার্যক্রমে জড়িত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ সরকারের সাথে মিলে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিকিৎসা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, “এই আইসিইউ উদ্বোধনের মাধ্যমে কক্সবাজারের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হল। কভিড-১৯ প্রতিরোধে কক্সবাজারের চিকিৎসা সেবা সক্ষমতায় নতুন ধাপ সংযোজিত হল। এই কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।”

ইউএনএইচসিআর ইতিমধ্যেই কক্সবাজারে দুইটি সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি ইনফেকশন আইসোলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার (সারি আইটিসি) চালু করে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করেছে। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষ করে এরই মধ্যে ২৯ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এছাড়াও ইউএনএইচসিআর ও মানবিক কার্যক্রমে জড়িত সংস্থাগুলো সম্মুখ সারির স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সহায়তা ও পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) প্রদান করেছে।
সারা বিশ্বে এখন বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭ কোটি ৯৫ লাখ, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের কারণে টেকসই ও স্থায়ী সমাধান আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ফলস্বরুপ পৃথিবীজুড়ে শরণার্থীদের জন্য স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও স্বমর্যাদায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

কভিড-১৯ মহামারির কারণে কক্সবাজারের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ইউএনএইচসিআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আবারও আহ্বান করছে বাংলাদেশের প্রতি সাহায্য ও একাত্মতার হাত বাড়িয়ে দিতে। কারণ আমরা কেউই নিরাপদ না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের প্রত্যেকে নিরাপদ।
ইউএনএইচসিআর-এর সিনিয়র অপারেশনস কোঅর্ডিনেটর হিনাকো টোকি বলেন, “আজকের এই বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আমরা স্মরণ করি পৃথিবীর সকল শরণার্থীদের, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের, জীবন ও মর্যাদা রক্ষার লড়াই এবং তাঁদের দৃঢ় প্রত্যয়কে। আজকের এই সদর হাসপাতালের আইসিইউ উদ্বোধনই প্রমাণ করে এ বছরের বিশ্ব শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য “এভরিওয়ান ক্যান মেক আ ডিফরেন্স, এভরি অ্যাকশন কাউন্টস”-অর্থাৎ প্রতিটি কাজই গুরুত্বপূর্ণ আর প্রত্যেকেই পারে পরিবর্তন আনতে।