কাস্টমস-ভ্যাটে ৫১ দিনে করোনা আক্রান্তে ‘সেঞ্চুরি’

রহমত রহমান: কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে আক্রান্ত বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। দুই বিভাগে আক্রান্ত শুরু হয় মূলত মে মাস থেকে। মাত্র ৫১ দিনে দুই বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০২। যা দৈনিক গড় হিসেবে দুইজন। সংস্পর্শে এসে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বিপুল পরিমাণ কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর প্রথম ৩৭ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা হাফ সেঞ্চুরি মানে ৫০-এ গিয়ে দাঁড়ায়।

আর পরবর্তী ১৪ দিনে আক্রান্ত হয়েছে ৫২ জন। এর মধ্যে দুইজন কর্মকর্তা মারা গেছেন। রাজস্ব আহরণ আর সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে দুই বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহামারির মধ্যেও যুদ্ধ করছেন। ফলে কখনো সহকর্মী, কখনো স্টেকহোল্ডার, কখনো যাতায়াত করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন।

## দুই বিভাগে মোট আক্রান্ত ১০২, প্রাথমিকভাবে সুস্থ ২৩, মৃত্যু দুই

## প্রথম ৩৭ দিনে আক্রান্ত ৫০, পরবর্তী ১৪ দিনে আক্রান্ত ৫২

## তিন ডেপুটি কমিশনার ও পাঁচ সহকারী কমিশনার আক্রান্ত

## নিজস্ব উদ্যোগে হচ্ছে পরীক্ষা, এনবিআর থেকে সহায়তার দাবি

অপরদিকে, আক্রান্তের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই সপরিবারে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন থেকে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও এনবিআর থেকে সেভাবে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিছু কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেট নিজস্ব উদ্যোগে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করছে। আক্রান্ত রোধে পর‌্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতে এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরো পড়ুন-কাস্টমস-ভ্যাটে করোনা আক্রান্তে ‘হাফ সেঞ্চুরি’

আরো পড়ুন-সুরক্ষা ছাড়াই শুল্কায়ন, ঝুঁকিতে কাস্টমস কর্মকর্তারা

আরো পড়ুন-ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে আক্রান্তের শীর্ষে ‘সিলেট ভ্যাট’

কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। ছুটির মধ্যে জরুরি সেবার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব বন্ধ হয়ে যায়। মহামারির প্রথম থেকেই সীমিত পরিসরে কাস্টমস হাউসগুলো খোলা ছিল। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ওষধের কাঁচামাল, চিকিৎসা সামগ্রী খালাসের জন্য খোলা ছিল। পরে ভ্যাট অফিস খোলা হয়।

প্রায় কোন প্রকার ব্যক্তিগত সুরক্ষা ছাড়াই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেট নিজস্ব উদ্যোগে কিছু সুরক্ষা সামগ্রী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেয়, যা যতসামান্য। রাজস্ব আহরণ আর সরবরাহ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে গিয়ে একের পর এক কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হতে শুরু করেন।

দুই বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দুই বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আক্রান্ত হতে শুরু করে। সেই হিসেবে মে মাস ও ২০ জুন পর্যন্ত মাত্র ৫১ দিনে আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ১০২ জন। দৈনিক গড় হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা দুইজনের বেশি। আক্রান্ত দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও পাঁচজন সহকারী কমিশনার রয়েছে।

হিসাব অনুযায়ী, ৬ জুন পর্যন্ত মাত্র ৩৭ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই সংখ্যার ঘরে, অর্থা ৫০ জন। আর পরবর্তী ১৪ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জন বেড়ে তিন অঙ্কের ঘর স্পর্শ করে, অর্থাৎ আক্রান্ত দাঁড়ায় ১০২। অনেকটা জ্যামিতিক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগ সপরিবারে আক্রান্ত।

কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মরতরা জানান, কাস্টমস হাউসে আক্রান্তের মূল কারণ জনসমাগম আর একে অপরের সংস্পর্শে আসা। কাস্টমস হাউসের কাজই হয় জনসমাগমের মাধ্যমে। তবে শতভাগ অটোমেশন হয়ে গেলে সংক্রমণ অনেকাংশে রোধ হতো। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোন কোয়ারেন্টাইন না থাকায় কর্মরতদের সংস্পর্শে এসে পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আরো সমস্যার মধ্যে রয়েছে যানবাহন ও সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা। অপরদিকে, ভ্যাট কমিশনারেটেও মোটামুটি জনসমাগম কম হয় না। তবে আক্রান্ত, কিন্তু উপসর্গহীন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

দুই বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, আক্রান্ত ১০২ জনের মধ্যে ৩৬ জনই ভ্যাটে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী। এলটিইউ ও ১১টি কমিশনারেটের মধ্যে খুলনা ও রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটে এখন পর‌্যন্ত কেউ আক্রান্ত হয়নি। আর ছয়টি কাস্টমস হাউসের মধ্যে বেনাপোল ছাড়া বাকি পাঁচটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬টি জন। ভ্যাট কমিশনারেটে এখন পর্যন্ত কেউ মৃত্যুবরণ করেনি।

তবে ঢাকা কাস্টম হাউসের একজন ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি), পাঁচজন সহকারী কমিশনার, ২৮ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ৪৩ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ১০ জন সিপাই রয়েছে। এছাড়া প্রধান সহকারী, অফিস সুপার, কম্পিউটার অপারেটর, চালক, অফিস সহায়ক রয়েছে।

(কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের আক্রান্তের সর্বশেষ ও নির্ভরযোগ্য আপডেট পেতে দৈনিক শেয়ার বিজের সাথে থাকুন)

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০