১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্মার্টকার্ড প্রদানের মাধ্যমে গতকাল রাজশাহীতে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্টকার্ড বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন হয়েছে। ৪ এপ্রিল থেকে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেও বিতরণ শুরু হবে এটির। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার তিন লাখ ১০ হাজার ২৪৫ ভোটারের প্রায় সবাই ক্রমান্বয়ে এ কার্ড পাবেন। তবে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের স্মার্টকার্ডটি এসেছে কি না, তা আগেই যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে যাদের কার্ড এখনও ‘নট ফাউন্ড’ দেখাবে, তাদের অযথা দাঁড়াতে হবে না লাইনে। তবে নামের বানান ও অন্যান্য তথ্য ভুল এবং ছবিতে অমিল থাকায় এ জেলার প্রায় ১৫ হাজার নাগরিক প্রথম ধাপে স্মার্টকার্ড পাবেন না।
গত ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী রাজধানীতে স্মার্টকার্ড বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ১৩ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে এ কার্ড বিতরণ শুরু হয়। আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে বরিশালেও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে স্মার্টকার্ড বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশজুড়ে মোটামুটি সুশৃঙ্খলভাবে এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় নির্বাচন কমিশনকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আগের কাগুজে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। সেখানে কার্ডধারীর ছবি ছিল অস্পষ্ট। অভিযোগ ছিল আঙুলের ছাপ নিয়েও। কেননা বয়স্ক ব্যক্তিসহ শারীরিক কারণে অনেকের আঙুলের ছাপ মেশিনে পাঠযোগ্য হতো না। স্মার্টকার্ড বিতরণের সময় ১০ আঙুলের ছাপের পাশাপাশি চোখের আইরিসের ছবিও নেওয়া হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্যে। এতে কার্ডধারীর পরিচয় নির্ণয়ে জটিলতা কমবে। মেশিন রিডেবল হওয়ায় এ কার্ড থেকে তথ্য বের করা যাবে দ্রুত। পাসপোর্ট করা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচা, নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ব্যাংক ও বিও হিসাব খোলাসহ ২২ ধরনের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে সহজে ব্যবহার করা যাবে এ কার্ড। কার্ডের চিপে সংরক্ষিত থাকবে নাম, পরিচয়, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, পেশাসহ ৩২ ধরনের তথ্য। ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকায় এ কার্ড সহজে নকল করা যাবে না। বিভিন্ন কাজে যেহেতু স্মার্টকার্ড ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, সেহেতু রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা লাভে নাগরিকদের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি জাতীয়ভাবে অপরাধও হ্রাস পাবে। তবে কার্ডে তথ্য হালনাগাদের প্রক্রিয়া আরও সহজ করা প্রয়োজন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এ অবশ্য জাতীয় পরিচয়ের জন্য একজন নাগরিকের আঙুলের ছাপ, হাতের ছাপ, তালুর ছাপ, আইরিশ বা চোখের কণিকা, মুখাবয়ব, ডিএনএ, স্বাক্ষর ও কণ্ঠস্বর সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এখনই সম্ভব না হলেও ধীরে ধীরে এগুলো যুক্ত করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করতে পারি। তবে বিদেশি যন্ত্র ও অর্থায়নে স্মার্টকার্ড কর্মসূচি বাস্তবায়িত হওয়ায় কিছু নাগরিক আশঙ্কা করছেন বিদেশি সংস্থার কাছে ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাওয়ার। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের উচিত হবে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।
Add Comment