শাহীন রহমান: যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধা-বিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক আয়োজন
অল্প বয়সে অসচ্ছল পরিবারে বিয়ে হয় বেলি বেগমের। থাকতেন পাকশী রেল কলোনিতে। সেখান থেকে চলে আসেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে। গ্রামের বাড়ির আঙিনায় শাশুড়ি চালকুমড়ার চাষ করতেন। চালকুমড়া বিক্রির পর সে টাকার কিছু অংশ তাকে দিতেন। সেখান থেকে কিছু টাকা জমিয়ে বেলি বেগম প্রথমে ১০টি মুরগির বাচ্চা কেনেন। সেই শুরু।
গত ৭ জানুয়ারি তিনি দেশসেরা সবজিচাষি হিসেবে কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তার স্বামী সিদ্দিকুর রহমানও জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক। বেলি বেগম নিজ চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ‘বেলি কৃষি খামার’। ৪০ বিঘা জমির এ খামার বর্তমানে দেশের অন্যতম আদর্শ খামার। তার খামারে এখন ৪০ শ্রমিক কাজ করেন। অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দেশের নানা কৃষি কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী আসেন এখানে। রাজধানীর খামারবাড়ীর কৃষি কর্মকর্তারাও আসেন।
শাশুড়ির দেওয়া টাকা জমিয়ে যে ১০টি মুরগির বাচ্চা কিনেছিলেন, তার আটটি বাচ্চা মারা যায়। বাকি দুটি বড় করেন। মুরগিগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। এভাবে ডিম থেকে ৪০টি মুরগির বাচ্চা পান। ডিম বিক্রি করে দুই হাজার ৫০০ টাকা পুঁজি হয়। এরপর কিছু টাকা ঋণ নিয়ে একটি গরু কেনেন। ছয়-সাত মাস পালন করার পর সেটি বিক্রি করে দেন। এরপর কেনেন একটি গাভি। এক বছর পর গাভিটি একটি বাছুর দেয়। সেটিও ছিল গাভি। সেই দুটি গাভি থেকে প্রতিদিন সাত কেজি দুধ পেতেন। এভাবে কেটে যায় এক বছর। এরপর বাড়ির আঙিনায় তিন কাঠা জমিতে গড়ে তোলেন একটি কুলের নার্সারি। এখান থেকে কুলের চারা বিক্রি করতেন। এভাবে চলতে চলতে ২০০৭ সালে তিনি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। পরের চার বছরে তিনি ৪৭ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেন। নিজ নামে কেনেন এক বিঘা পাঁচ কাঠার একটি জমি। সেখানে গড়ে তোলেন সবজি ও ফলের বাগান। বর্তমানে তার এ সবজিখামারে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে গাজর, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ধনেপাতাসহ নানা জাতের সবজি ও ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এখন আর বেলি বেগমকে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। খামার থেকে বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় করেন।
শুধু সবজি চাষই নয়, তিনি নিজেকে নানা সামাজিক কাজে যুক্ত রেখেছেন। বেলি বেগম বলেন, ‘আমি তেমন লেখাপড়া জানি না। তবে পরিশ্রম করে সে ঘাটতি পুষিয়ে নিয়েছি, স্বাবলম্বী হয়েছি। দেশের নারীদের এভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত।’ তিনি জানান, স্বামীর পাশাপাশি মেয়ে স্মিতা খাতুনও তাকে এ কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন। শ্রমিকদের নির্দেশনা দেন স্মিতা।
ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বেলি বেগম দেশের একজন অন্যতম সেরা নারী কৃষি উদ্যোক্তা। তাকে দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
পাবনা
Add Comment