নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অভিবাসীরা রয়েছেন বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক। তিনি বলেন, তাদের রক্ষার জন্য বাংলাদেশকে বৈশ্বিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দিতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘কভিড-১৯: অভিবাসী ও রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব এবং বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ বিষয়ক এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন।
শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে বৈশ্বিক নেতৃত্বের বিষয়টি বলা আছে এবং এটিকে এখন বাস্তবায়ন করা জরুরি।
বর্তমানে প্রচলিত মাইগ্রেশন অর্ডার ২.০-এর বদলে মাইগ্রেশন অর্ডার ৩.০ দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে অভিবাসন ব্যবস্থা কী হবে, সেটির জন্য বৈশ্বিক সংলাপ হওয়া দরকার। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, স্বাভাবিক পথে অভিবাসন না হলে মানবপাচার আগের যে কোনো সময়ের থেকে বৃদ্ধি পাবে।
অধিকারের ওপর জোর দিয়ে শহীদুল হক বলেন, অনেক দেশ মহামারির দায় অভিবাসীদের ওপর চাপাচ্ছে এবং দাবি করছে তাদের জন্য এটি ছড়িয়েছে এবং এটিকে ব্যবহার করে সস্তা জনপ্রিয় ইস্যু (পপুলার) বানিয়ে তাদের বের করে দিতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, এর ফলে অভিবাসন আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি রাজনীতিকরণ হচ্ছে এবং রাষ্ট্রের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
এ সময় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, গত দুই দশকে দারিদ্র্যসীমা অনেক কমেছে, কিন্তু কভিড-১৯ এর কারণে এ অবস্থা আরও খারাপ হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে সবার উন্নতি হয়েছে, কিন্তু চরম দারিদ্য সীমার নিচে থাকা পাঁচ শতাংশ আরও বেশি গরিব হয়েছে এ প্রবৃদ্ধির জন্য।
বাংলাদেশের ফিসক্যাল পলিসির সুফল পাওয়া যায় না উল্লেখ করে আহসান মনসুর বলেন, একদিকে যে কর আদায় করা হয় সেটির ফলে সম্পদ বণ্টন সুষ্ঠু হয় না এবং অন্যদিকে সরকারি ব্যয় অগ্রাধিকারভিত্তিক খাতে ব্যয় হয় না।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি দেশে সমস্যাগ্রস্ত অভিবাসীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ মিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তেলের দাম কমে যাওয়া এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর কম অভিবাসী গ্রহণ নীতির কারণে বাংলাদেশসহ অন্যান্য শ্রমিক পাঠানো দেশগুলো সমস্যায় পড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন নতুন করে দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি এবং যেসব ক্ষেত্রে বয়সের কারণে দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না, সেসব ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।’
বিআইডিএসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ বলেন নাজনীন আহমেদ বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির মধ্যে বৈষম্য কমাতে হবে। যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে না, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সুযোগ দিতে হবে এবং এ সুযোগ সবাইকে দিতে হবে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হেলাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘মহামারির কারণে সমাজে ব্যবহারের একটি পরিবর্তন এসেছে এবং এ বিষয়ে সবার সচেতন থাকা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারে ব্যবহারের পরিবর্তন বেশি হচ্ছে, কারণ একটি ছোট জায়গায় অনেক বেশি লোককে অনেক বেশি সময়ে থাকতে হচ্ছে।