রবিউল কমল: টলুইন একটি যৌগিক পদার্থ। ফালবার্গ নামের এক তরুণ বিজ্ঞানী টলুইন নিয়ে গবেষণা করেন। বয়সে তরুণ হলেও ফালবার্গের উৎসাহ ছিল অদম্য। পরিশ্রমও করতেন প্রচুর। তবে তার একটাই সমস্যা ছিল। তা হচ্ছে গবেষণা করতে করতে তিনি সব কিছু ভুলে যেতেন। থাকতেন একজনের গাড়িতে, পেয়িং গেস্ট হিসেবে।
একবার খাবার সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। তবে খাওয়ার নাম নেই ফালবার্গের মুখে। গৃহকর্ত্রী বিরক্ত হয়ে গেলেন। তিনি ফালবার্গের গবেষণাগারে ঢুকে দু-চার কথা শুনিয়ে দিলেন। ভয় দেখালেন, এখনি খেতে না এলে তার জিনিসপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবেন।
তাই দ্রুত খাবার খেতে এলেন ফালবার্গ। তবে খাবার মুখে দিতেই ফালবার্গ অনুভব করলেন, যা-ই মুখে তুলছেন, তা-ই মিষ্টি লাগছে। তিনি মিষ্টি একদমই পছন্দ করতেন না। গৃহকর্ত্রী রান্নায় চিনি ব্যবহার করেছেন ভেবে দু’কথা শুনিয়ে দিলেন।
কিন্তু গৃহকর্ত্রী তো রান্নায় মিষ্টি ব্যবহার করেননি! অতএব তিনি কেন মুখ বুঁজে রইবেন? দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, তোমার মুখটাই আজ খারাপ হয়ে আছে। আমি রান্নায় একটুও মিষ্টি ব্যবহার করিনি। ফালবার্গ তার কথা বিশ্বাস করলেন না। রাগে গড়গড় করতে করতে বেরিয়ে গিয়ে বসলেন তার গবেষণাগারে। তিনি এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, কাজে মনোযোগ দিতে পারছিলেন না।
এভাবে কেটে যায় কিছু সময়। মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হওয়ার পর ভাবতে শুরু করলেন গৃহকর্ত্রীর কথা। তিনি যদি মিষ্টি ব্যবহার না-ই করে থাকেন, তবে এত মিষ্টি এলো কোথা থেকে। তাছাড়া মিষ্টি ব্যবহার করলেও রান্নায় কেউ কি এত মিষ্টি দেয়? ভাবতে ভাবতে অজান্তেই নিজের আঙুলটা মুখে দিলেন। হঠাৎ চমকে উঠলেন।
একি! হাতের আঙুলে এত মিষ্টি এলো কোথা থেকে?
এতক্ষণে বুঝতে পারলেন দোষটা গৃহকর্ত্রীর নয়। যত দোষ সব তারই। মনে পড়ে, খাওয়ার আগে হাত ধুতে ভুলে গিয়েছিলেন। সম্ভবত গবেষণা করতে করতে তিনি মনের অজান্তে এমন একটা জিনিস তৈরি করে ফেলেছেন, যা চিনির চেয়ে শতগুণ মিষ্টি।
টেবিলের ওপর থেকে থরে থরে সাজানো জিনিস নিয়ে পুনরায় গবেষণা শুরু করলেন। তবে তাকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেই আশ্চর্য পদার্থটি আবার আবিষ্কার করে ফেললেন। সেই পদার্থটিকেই আমরা ‘স্যাকারিন’ নামে চিনি।
সাংবাদিক
Add Comment