করোনার ধাক্কায় লোকসানে তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গায়ে করোনাভাইরাসের ধাক্কা লাগবে এমনটি আগে থেকেই ধারণা করা যাচ্ছিল। সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এই ধাক্কা বেশি লেগেছে বস্ত্র খাতে। বিশেষ করে যে কোম্পানিগুলো আমদানি-রপ্তানিনির্ভর তাদের গায়ে করোনার হাওয়া একটু বেশিই লেগেছে।

তেমন একটি কোম্পানি তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ। সম্প্রতি কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, লাভ থেকে লোকসানে নেমে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনার কারণেই প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থার এমন দশা হয়েছে।

তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। এর যাত্রা শুরু হয় ২০০২ সালের ২৭ আগস্ট। প্রতিষ্ঠানটি কারখানা, টঙ্গীর গোপালপুর স্টেশনের পূর্ব পাশের মেইন রোডে অবস্থিত। এর উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশসহ জাপানে রপ্তানি হয়। কোম্পানিটি মূল উপাদান প্রধানত চীন থেকে আমদানি করা হয়। এছাড়া অন্যান্য কাঁচামাল বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও কেনা হয়।

বাংলাদেশে মার্চ মাসে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও, এর বেশ আগেই বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই মহামারি দেখা যায়। যে কারণে ব্যবসায় ভাটা পড়ে। আর বাংলাদেশ করোনা শনাক্তের পর বন্ধ থাকে সব ধরনের আমদানি রপ্তানি, যার সবচেয়ে বেশি মাশুল দিতে হয়েছে বস্ত্র খাতকে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’২০) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ছিল ১৪ পয়সা। একইভাবে গত ৯ মাসে (জুলাই’১৯-মার্চ’২০) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৩৮ পয়সা। একই সময়ে বিক্রিও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক ইফতেখার আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘করোনার বেশ আগে থেকেই আমাদের বিক্রি কমে যায়। আবার বিক্রি বাড়াতে যখন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তখনই করোনা মহামারি দেখা দেয়। যে কারণে আমাদের ব্যবসায় অনেক ধকল গেছে। এই ধকল কাটিয়ে উঠলে আমরা আবারও আগের জায়গায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করব।’

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার দিকে তাকালে দেখা যায়, ক্রমাগতভাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমে আসছে। ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফা ছিল আট কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ সালে মুনাফা কমে দাঁড়ায় সাত কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮ লাখে। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে করোনার কারণে তা লোকসানে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় প্রতি শেয়ারে ১৬ টাকা প্রিমিয়াম নিয়েছিল তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ। ফলে ১০ টাকা অভিহিত দরসহ প্রতিটি শেয়ারের দর পড়ে ২৬ টাকা। কিন্তু তালিকাভুক্তির চার বছর না যেতেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ইস্যু দরের নিচে নেমে যায়। আর বর্তমানে এই শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে ১১ টাকার নিচে। ফলে কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারদর নেমেছে সর্বনি¤েœ। গতকাল এই শেয়ার বিক্রি হয় ১০ টাকা ৫০ পয়সা

এদিকে শেয়ারদর কমে যাওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, সেই সময় কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দেওয়া হয়েছিল, যার মাশুল এখন তাদের দিতে হচ্ছে। বিষয়টিতে একই মত পোষণ করেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, যে কোনো কোম্পানির অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএসইসির আরও সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ কোনোভাবে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে বা সক্ষমতা কমে গেলে এর মাশুল বিনিয়োগকারীদেরই দিতে হয়। তাই কোম্পানির অনুমোদনের বেলায় বিএসইসির বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রাখা উচিত। তবে এ কথাও ঠিক যে, অনেক সময় ভালো কোম্পানি পরিস্থিতির শিকার হয়ে আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে দুই কোটি ৪৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০