গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও মাংস আমদানি বেড়েছে আড়াই গুণ

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম : দেশ গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও হিমায়িত মাংস আমদানি বেড়েছে আড়াই গুণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি হলেও তার সিংহভাগই আসছে ভারত থেকে। আর ভারত থেকে আসা প্রায় সবই মহিষের মাংস, যা গরুর মাংস বলে বিক্রি করা হয় দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোয়। কারণ দামে কম হওয়ায় দেশের প্রায় সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট এ মাংস ব্যবহার করে। বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মহিষের মাংস আমদানি হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার টন, যা আগের অর্থবছরে ছিল চার হাজার টন।

এদিকে বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবাধে মাংস আমদানি শুরু হলে দেশের পোলট্রি ও ডেইরিশিল্প ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। বেকার হবে পড়বেন খামারিরা। হুমকির মুখে পড়বে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, যার বিরূপ প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে। বিদেশ থেকে মাংস আনা হলে গ্রামের সাধারণ কৃষকসহ প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদিত গরুর উপযুক্ত দাম থেকে বঞ্চিত হবেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর হবে। এতে দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত চামড়াশিল্পে কাঁচামালের সংকট দেখা দেবে। পাশাপাশি সংকটে পড়বে দেশের চামড়াশিল্প ও দুগ্ধ উৎপাদন শিল্প।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নব্বইয়ের দশকে দেশে মাংসের চাহিদা পূরণে জবাই করা পশুর ৭০ ভাগ মাংস আসত বিদেশ থেকে। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশে পাঁচ লাখেরও বেশি খামার গড়ে ওঠায় পাল্টে গেছে সে চিত্র। এখন মাংস উৎপাদনে দেশ শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। তাই খাতসংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, ক্রমবিকাশের এ সময়ে বিদেশ থেকে অবাধে গরু-মহিষের হিমায়িত মাংস আমদানি শুরু হলে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

দেশে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার উৎপাদন বাড়ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজারে। এর মধ্যে গরু উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি ৪২ লাখ ২৮ হাজার, মহিষ ১৪ লাখ ৮৬ হাজার, ভেড়া ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার এবং ছাগল উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার, যা আগের বছরের চেয়ে তিন লাখ ৯৫ হাজার বেশি।

এছাড়া গত পাঁচ বছরে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ। অর্থাৎ আমাদের উৎপাদন চাহিদা মেটাতে পারছে। সাধারণত যেসব পণ্যের বিপুল সরবরাহ থাকে এবং স্থানীয়ভাবে চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়, তখন ওইসব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানো হয়। এমন প্রেক্ষাপটেই হিমায়িত মাংসে শুল্ক বাড়ানো যেতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের ১০৫টি চালানের মাধ্যমে হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি হয়েছে ১০ হাজার ৪৬৯ মেট্রিক টন ৯১০ কেজি। এসব মাংসের আমদানি মূল্য ৯২ কেটি ৬৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। তার আগের অর্থবছরে আমদানি হয়ে চার হাজার ১৫৪ মেট্রিক টন। এ হিসাব মাত্র দুটি এইচএস কোডের বিপরীতে, তাছাড়া আরও একাধিক এইচএস কোডে হিমায়িত মাংস আমদানি হতে পারে। একই সঙ্গে দেশের সব বন্দর মিলে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বলেন, দেশে দানাদার খাদ্যের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতায় ঠিক থাকতে কষ্ট হবে। তাই যে দানাদার খাদ্য আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলোর শুল্ক একেবারে তুলে দিতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। একই সঙ্গে বন্দরে পশুখাদ্য খালাসে দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। পশুখাদ্য আমদানিতে শুল্ক কমালে বর্তমানের চেয়ে কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে হিমায়িত মাংস আমদানি বেড়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গরু বন্ধ হওয়ার পর থেকে মাংস আমদানি বেড়েছে। আর এসব হিমায়িত মাংস কম দামে পাওয়ার ফলে প্রায় শতভাগ ব্যবহার করছে দেশের হোটেল-রেস্টুরেন্ট। বর্তমানে ঢাকা শহরে সাড়ে চার হাজার হোটেল-রেস্টুরেন্ট হয়েছে। আর সারা দেশে এর সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। এতে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত মাংস বিক্রি কম হবে। তাতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন প্রান্তিক খামারিরা। তবে সরাসরি আমদানি বন্ধ করা যাবে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে সরকারকে সার্কিট বেকার বসাতে হবে, যাতে প্রয়োজন হলে এনওসির মাধ্যমে আমদানি করা যায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০