নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম কমার্শিয়াল কন্টেইনার ট্রেন কলকাতা থেকে বেনাপোলে প্রবেশ করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আমদানিকারকদের ৫০টি কন্টেইনারে ৬৪০ মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে ভারতের প্রথম কার্গো ট্রেন।
করোনা মহামারির মধ্যে এর আগে প্রথম পার্সেল ট্রেনে এসেছিল ৩৮৪ টন শুকনো মরিচ। এ ছাড়া অন্যান্য ট্রেনে পেঁয়াজসহ খাদ্য সামগ্রী আসছে সাধারণ মালবাহী ট্রেনে। এবার কার্গো ট্রেনে বেনাপোল বন্দরে এসেছে পি অ্যান্ড জি বাংলাদেশ লিমিটেডসহ আটটি কোম্পানির পণ্য নিয়ে।

শনিবার এ কার্গো ট্রেনের উদ্বোধন করেন বেনাপোল কাস্টম হাউস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান। ফিতা কেটে তিনি নতুন এই বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের নতুন দিগন্তের শুভ সূচনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল, উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার, সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন, কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন, রেল স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কন্টেইনার ব্যবস্থপনায় এম জি এইচ গ্রুপ (ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক) এর ভেন্ডর পার্টনার এম এম ইন্টারন্যশনালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কলকাতার মমিনপুর হতে গত ২৪ জুলাই ট্রেনটি বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসে রোববার (২৬ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে বেনাপোল স্টেশনে এসে পৌঁছায়। পরে স্টেশন থেকে ট্রেনটি বন্দর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম কার্গো ট্রেনে প্রকটার অ্যান্ড গ্যাম্বেল (পি অ্যান্ড জি), চিটাগং এশিয়ান এপ্যারেলস্ লি., ডেনিমেক লি., প্যাসিফিক জিন্স, ফ্যাশান ফোরাম, শাহ মাখদুম এর বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য ও ডেনিম ফেব্রিক্স আমদানি করা হয়।

বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, করোনার শুরুতে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছিল। আজ কন্টেইনার এর মাধ্যমে আমদানি-বাণিজ্য শুরুতে আমাদের স্টক হোল্ডারসহ সকল ব্যবসায়ীর বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এতে সময় খরচ যেমন বাঁচবে তেমনি যথেষ্ট নিরাপত্তাও রয়েছে। ভারত থেকে রেলযোগে মালামাল আসলে আমাদের রেল খাতেও উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, বন্দর একটি চার্জ পাবে। ব্যবসায়ীদের খরচ কম হবে। আগে সাধারণ রেলে পণ্য এসেছে ভারত থেকে। এখন থেকে কন্টেইনার এর মাধ্যেমে পণ্য আসা শুরু হলো। ব্যবসায়ীরা রেলপথে আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ নব দিগন্তের উন্মোচনে বেনাপোল কাস্টম হাউস রাজস্ব আদায়ে আমূল পরিবর্তন আনতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।
কমিশনার বলেন, ৫০ কন্টেইনারের মধ্যে এমজিএইচ গ্রুপের ২২টি কন্টেইনার। যাতে জিলেট ফোম থেকে শুরু করে জিলেটের সব পণ্য রয়েছে। এসব পণ্য উচ্চ শুল্কের পণ্য। বাকি কন্টেইনারে গার্মেন্টের কাঁচামাল রয়েছে। ৫০টি কন্টেইনারে ভালো শুল্ককর আদায় হবে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে, ইতোমধ্যে বেনাপোল কাস্টম হাউস এনবিআরের তত্ত্বাবধানে একটি এসওপি জারি করা হয়েছে, যেখানে ‘ভারত হতে রেলযোগে আমদানিকৃত পণ্য কিভাবে ব্যবস্থিত হবে’ তা উল্লেখ করা হয়েছে। ২২ জুলাই বেনাপোল কমিশনার সই করা এ আদেশ জারি করা হয়। এর আগে ৪ জুন এনবিআর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সাইট-ডোর কন্টেইনারের মাধ্যমে মালামাল আমদানির অনুমতি দেয়। এনবিআরের অনুমতির আলোকে কিভাবে পণ্য ব্যবস্থিতকরণ হবে সে বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশে ২০টি বিষয় উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো-আমদানি পণ্যবাহী সাইট-ডোর কন্টেইনারের ভারতীয় রেল ওয়াগনযোগে সপ্তাহে প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে। রেল কন্টেইনারের মাধ্যমে বেনাপোল বন্দর দিয়ে অবাধে আমদানিযোগ্য প্রতিটি পণ্য আমদানি নীতি আদেশ পরিপালন সাপেক্ষে আমদানি করা যাবে। এ ছাড়াও বন্ডেড পণ্য, শর্তযুক্ত পণ্য ইত্যাদি পণ্যের শর্তাদি পরিপালনপূর্বক আমদানি করা যাবে। তবে গুঁড়ো দুধ ও বন্ডেড সুবিধা বর্হিভূত সুতা আমদানি করা যাবে না।

পেঁয়াজ, শুকনো মরিচ, আঁদা, রসুন, হলুদ, মসুর ডাল, শুকনা বরই, তেঁতুল, তেঁতুলের বীজ, সার, স্টোন চিপস, ফ্লাই অ্যাশ, জিপসাম, খৈল, তুলা, ধানবীজ, চালসহ কাস্টম হাউস বেনাপোলের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে বাল্ক আইটেমের অন্যান্য পণ্য বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে আমদানি অব্যাহত থাকবে। একটি ট্রেনে সর্বোচ্চ ৪২টি রেলবগিতে পণ্য আমদানি করা যাবে। একটি ট্রেনের সকল বগিতে সাইট-ডোর কন্টেইনারের মাধ্যমে একই আমদানিকারকের একই ধরনের বা একাধিক ধরনের পণ্য আমদানি করা যাবে। এছাড়া একাধিক আমদানিকারকের এক ধরনের পণ্য আমদানি করা যাবে। বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য আনলোডিং এর স্থানের কাজ বন্দর দ্রুত শেষ করবে। কাস্টমস কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পণ্য আনলোড করা হবে পোর্ট ক্লিয়ারেন্সের ভিত্তিতে ট্রেন বন্দর ত্যাগ করবে প্রভূতি।
###