১৫ এপ্রিলের পর গণপরিবহনে সিটিং, গেটলক সার্ভিস থাকবে না ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের এ বক্তব্য নিয়ে গতকাল শেয়ার বিজে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠক হয়তো দেখেছেন। সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা চলায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিবেদক। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ঢাকা শহরে বহু সিটিং সার্ভিস রয়েছে, যারা নিয়মিত দাঁড়ানো যাত্রী পরিবহন করলেও সবার কাছ থেকেই আদায় করে ‘সিটিং’ ভাড়া। বহু লোকাল বাসও দিনের ব্যস্ত সময়ে হয়ে যায় সিটিং সার্ভিস। অভিযোগ রয়েছে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করারও। গণপরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়ার তালিকা প্রদর্শনের বিধান থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিন্তু সিটিং সার্ভিস বন্ধে পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কি এমন বক্তব্য দিতে পারেন? এ ধরনের বক্তব্য সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া হলে তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেতো। সমিতিটি অবশ্য বলছে, রোড পারমিটে ‘সিটিং সার্ভিস’ বলে কোনো শব্দ নেই। সেক্ষেত্রে এতদিন কীভাবে সড়কে সিটিং সার্ভিসগুলো চললো, সেটিও প্রশ্ন।
সড়ক পরিবহনে সীমাহীন নৈরাজ্য চলে আসছে। যত্রতত্র বাস থামিয়ে ও রাস্তা আটকে লোক ওঠানো-নামানো থেকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় গোটা পরিবহনব্যবস্থাই এক ধরনের যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন নারী যাত্রীরা। তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন পর্যাপ্ত নয়। বহু পুরুষ যাত্রীর মাঝে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয় বলে হরহামেশাই ঘটে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। সেগুলো এড়াতে হেলপাররা আবার ভিড়ের সময় মহিলাদের বাসেই ওঠাতে চান না। ফলে তারা পড়েন সীমাহীন দুর্ভোগে। তবে রাজধানীর কিছু সিটিং সার্ভিস নিয়ম মেনে চলছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। সে সার্ভিসগুলোতে এক ধরনের নিশ্চিন্তেই যাতায়াত করেছেন তারা। এখন হুট করে সব সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দিলে বিপাকে পড়বেন এ যাত্রীরা। অনেকেই অধিক অর্থের বিনিময়েও গণপরিবহনে নিশ্চিন্তে বসে যেতে আগ্রহী। একই কথা প্রযোজ্য এসি বাসের ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের চাহিদার বিবেচনায় রেখে সড়কে তাই চালু করা উচিত বিভিন্ন ধরনের বাস সেবা। ভালো মানের বাসে বসে যেতে পারলে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহনে যাতায়াতে আগ্রহী হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তাদের সচলতা বেড়ে ওঠায় নারীদের জন্য আলাদা বাসের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। লাভজনক নয় বিধায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হয়তো এ ধরনের বাস পথে নামাবে না; কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত বিআরটিসির উচিত ভর্তুকি দিয়ে হলেও ব্যস্ত রুটে এ সার্ভিস চালু রাখা।
ভালো সেবা পেতে কিছুটা অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় এখনও বাস ভাড়া কিন্তু অনেকটাই কম। যৌক্তিক পর্যায়ে ভাড়া বাড়িয়ে হলেও রাজধানীসহ শহরগুলোতে যাত্রীদের সেবায় মানসম্মত গণপরিবহন চালু করা এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য জনবহুল শহরের নিয়মতান্ত্রিক পরিবহনব্যবস্থা থেকেও ধারণা নিতে পারি আমরা।
Add Comment