যমুনার তলদেশে টানেল নির্মাণ: সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অত্যধিক ব্যয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে দাতাদের ঋণ সহায়তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে জাপান ও চীনকে প্রস্তাব দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এবার টানেলটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরিবর্তে প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সুপারিশ করেছে কমিশন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করা যাবে।

সেতু বিভাগের তথ্যমতে, সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পে কারিগরি সহায়তার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও বিশ্বব্যাংক, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সাড়া পাওয়া যায়নি। এজন্য সরকারি অর্থায়নে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ২৫-২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরের সময় যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে জাপান আগ্রহ দেখায়। এ প্রকল্পসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান সরকারের ঋণ  দেওয়ার বিষয়ে যৌথ ইশতেহার স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পরে জাইকা জানায়, তারা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে না। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

এদিকে পরে বিশ্বব্যাংককে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে সে প্রস্তাবে কোনো সাড়া দেয়নি সংস্থাটি। এতে শেষ পর্যন্ত সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ‘যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা’ প্রস্তাব করা হয়। চলতি বছর শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এ তিন নদী দেশকে ভৌগোলিকভাবে উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলÑ এ চার ভাগে বিভক্ত করেছে। যমুনা নদী ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রথমে পদ্মা এবং এরপর মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনার প্রশস্ততা অনেক বেশি। বর্ষাকালে ৮ থেকে ১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত হয়ে থাকে। এ নদী দিয়ে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয় ও ৬০০ মিলিয়ন টন পলি বহন করে থাকে। পলি বহনের বিবেচনায় যমুনা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং পানি প্রবাহের দিক থেকে বৃহত্তম নদী। পলি জমার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেতুর পরিবর্তে টানেল নির্মাণ সুবিধাজনক হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে বালাশী এবং বাহাদুরাবাদ অবস্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে টানেলের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে। যমুনা টানেল বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে সম্ভাব্য সমীক্ষা পরিচালনার জন্য বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও আইডিবির কাছে কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নিজস্ব অর্থায়নে সমীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল আধা সরকারিপত্রে (ডিও লেটার) মুখ্য সচিব উল্লেখ করেন, বাস্তবে যদি রেলপথ রাখার কারণে নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে রেলপথ বাদ দিয়ে শুধু সড়কপথ নির্মাণ করা যৌক্তিক হবে।

অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৬ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গাইবান্ধা জেলার বালাশীঘাট এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ঘাটে সংযোগ টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে প্রকল্পটির পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) এ বৈঠকে বলা হয়, কোনো প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুই থেকে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করা যায়। তবে যমুনা টানেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি টাকার বেশি। এত ব্যয়বহুল প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়।

এক্ষেত্রে সেতু বিভাগ যুক্তি দেখায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের দ্বিতীয় টানেলে রেলপথ সংযোজনের কথা ছিল। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীদের সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই খরচ কমানোর জন্য প্রকল্প থেকে রেল নির্মাণ বাদ দেওয়া যেতে পারে। তবে এতেও ব্যয় খুব বেশি কমবে না বিধায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরিবর্তে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরামর্শ দেয় পরিকল্পনা কমিশন। পরে অর্থায়ন নিশ্চিত হলে বিস্তারিত সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নের জন্য পৃথক প্রকল্প নেওয়ার সুপারিশও করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, প্রকল্পটির ব্যয় নিয়ে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণে শিগগিরই বৈঠক করা হবে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর মতামত নেওয়া হবে। এর পর প্রকল্পটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০