কারসাজির শঙ্কা বাড়ছে

চার দিনে লেনদেন নিষ্পত্তি হবে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারের!

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড ক্যাটেগরি’র কোম্পানিগুলোকে স্বাভাবিক উৎপাদন ও মুনাফায় ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জেড ক্যাটেগরির কোম্পানিগুলোর লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা কমিয়ে চার দিনে নামিয়ে আনা। বর্তমানে এই ধরনের কোম্পানির লেনদেন নিষ্পত্তি হতে টি+৯ অর্থাৎ ১০ দিন সময় লাগে।

এছাড়া কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা, শেয়ারহোল্ডারদের অনলাইন ভোটিংয়ের পাশাপাশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি বিএসইসির সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, ‘জেড’ ক্যাটেগরি বিষয়ে আগের সব নোটিফিকেশন ও আদেশ বাতিল করে শিগগিরই একটি নোটিফিকেশন ইস্যু করা হবে। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানিগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি ও পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির লেনদেন সময় কমিয়ে আনা নিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই ধরনের শেয়ার নিয়ে এমনিতেই প্রায় কারসাজির খবর শোনা যায়। এরপর যদি লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়, তবে তা বাজারের জন্য ভালো হবে না। এতে কারসাজির আশঙ্কা আরও বাড়বে। তবে বিএসইসি অন্যান্য যেসব সংস্কারের কথা বলেছে সেসব শর্ত যদি আগে পূরণ করা হয়, তবে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সবার আগে এই ধরনের কোম্পানির ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য যে সংস্কার আছে তা করতে হবে। তারপর উচিত হবে লেনদেন সময়সীমা কমিয়ে আনা। সেটা না হলে বাজারে এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজির আশঙ্কা থেকেই যাবে।

বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ থাকা, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়া, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে স্থান পায়। এই ক্যাটেগরিতে থাকা কোম্পানির শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগে। স্টক এক্সচেঞ্জের অন্যান্য ক্যাটেগরির শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি হতে তিন দিন সময় লাগলেও জেড ক্যাটাগরিতে সময় লাগে ১০ দিন। এছাড়া জেড ক্যাটেগরির শেয়ারে মার্জিন ঋণ সুবিধাও পাওয়া যায় না।

জেড ক্যাটেগরির সব উদ্যোক্তা ও বর্তমান পরিচালকদের ধারণকৃত শেয়ার বিক্রয়, হস্তান্তর ও স্থানান্তর থাকবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই ক্যাটেগরিতে থাকা কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে হবে। এছাড়া এজিএম ও ইজিএমে (বিশেষ সাধারণ সভা) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম অথবা হাইব্রিড সিস্টেমের মাধ্যমে ই-ভোটিং অথবা অনলাইন ভোটিংয়ের সুবিধা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এছাড়া এসইসি জানিয়েছে, যেসব কোম্পানি দুই বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটেগরিতে রয়েছে, সেসব কোম্পানি ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে চলমান বোর্ড পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হলে বর্তমান পরিচালক ও উদ্যোক্তারা তালিকাভুক্ত অন্য কোনো কোম্পানি ও পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী কোনো কোম্পানির পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না। অন্যদিকে জেড ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা ও জেড ক্যাটেগরিতে স্থান পাওয়ার শর্তের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে পরপর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ প্রদান ও এজিএম আয়োজনের ব্যর্থতায় অথবা ছয় মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার জেড ক্যাটেগরিতে লেনদেন হবে। এছাড়া পরপর দুই বছর নিট কার্যকর লোকসান অথবা বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে তারল্য প্রবাহ ঋণাত্মক হলেও ওই ক্যাটেগরিতে স্থান পাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০