জাবির হোসেইন: দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়। এর সূত্রপাত মূলত ছোটবেলায়। আমরা ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় দেখেছি, শক্তিশালী ছেলেটি কারণে-অকারণে দুর্বল ছেলেটির ওপর অত্যাচার করে। আমরা নিজেরাও হয়তো এ অপকর্মটি করেছি কিংবা সবলকে সহায়তা করেছি।
লন্ডনের ১৬ বছর বয়সী ছাত্র গ্রেস ম্যাথিউ গত ৯ বছর ধরে এ ধরনের অত্যাচার সহ্য করে আসছে। এ কারণে সে দুবার স্কুল পরিবর্তন করেছে। এমনকি মানসিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একবার আত্মহত্যারও চিন্তা করেছিল সে।
বিবিসি পরিচালিত এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, এমন সমস্যায় ভোগা অর্ধেকের বেশি টিনএজার নিজেরাই ব্যাপারটা মোকাবিলা করার চেষ্টা করে। অনেকে এ বিষয়ে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলে না। এসব নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায়।
‘প্রতি সপ্তাহে স্কুলে পিটুনি খাই। শিক্ষকরা তা দেখেও না দেখার ভান করেন। এমনকি তারাও আমাকে নিয়ে কটু কথা বলেন’, বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনই জানিয়েছে গ্রেস।
গ্রেসের মা সারা ম্যাথিউ বলেন, স্কুলের বাইরে মিউজিক ক্লাস ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে কিছুটা মানসিক স্বস্তি পেয়েছে গ্রেস। প্রথম দুটি বিদ্যালয় তাকে তেমন কোনো সহায়তা করেনি। তবে তৃতীয় অর্থাৎ বর্তমান বিদ্যালয়টি তাকে বেশ সহযোগিতা করেছে। এখানে সে ‘অ্যান্টি-বুলিং অ্যামবাসেডর’ হিসেবে অন্যকে সাহায্যও করছে।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক হাজার বিদ্যালয়ে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে দেশটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান কমরেস। তারা দেখেছে, এক দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে বুলিংয়ের শিকার। প্রায় সবাই-ই নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। ফলে বিষণœতার পাশাপাশি সমাজের প্রতি বিতৃষ্ণা জšে§ছে অনেকের। অনেকেই প্রায় সব সময় ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। দুই দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী সবকিছুতেই থাকে অসন্তুষ্ট।
তাই কমরেস মনে করে, ছাত্রছাত্রীদের মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য বিদ্যালয়ে কাউন্সেলর নিয়োগ দেওয়া উচিত। তবে তাকে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। তিনি যেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খোলামেলাভাবে আলোচনা করেন। যদিও বর্তমানে ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছে, তারা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সহায়তা পেয়ে থাকে।
শিক্ষকদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭৩ শতাংশ শিক্ষক তাদের অবসরে অবহেলিত কিছু শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করেন। তবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষকের কোনো প্রশিক্ষণ নেই।
গত জানুয়ারিতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে পুরনো ধ্যান-ধারণা বদলানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এজন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে চায় তার সরকার। এর মধ্যে রয়েছেÑস্কুলগুলোর সঙ্গে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের যোগাযোগ আরও বাড়ানো, সব বিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে শিক্ষকদের ফার্স্ট এইড প্রশিক্ষণ প্রদান নিশ্চিত করা প্রভৃতি।
স্কুলগুলোর ওপর পরিচালিত জরিপের প্রতিক্রিয়ায় শিশু ও পরিবারবিষয়ক মন্ত্র্রী অ্যাডওয়ার্ড টিম্পসন বলেন, ‘সরকার স্কুলগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের পুনঃসংস্কার চায়। বিষয়টিকে কীভাবে আরও সময়োপযোগী করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা আন্তরিক। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যে ধরনের মানসিকতা ও শিক্ষা প্রয়োজন, সেগুলো যেন স্কুল থেকেই প্রদান করা যায় সে লক্ষ্যে আমরাকাজ করবো।’
এক জরিপে দেখা গেছে, এক-চতুর্থাংশ শিশুই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় কোনো চিকিৎসা পায় না। বিবিসির রিপোর্টে আরও কিছু বেদনাদায়ক ঘটনার বিবরণ রয়েছে, যেখানে দেখা যায় ভুক্তভোগীরা কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতাই পায় না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রত।
সাংবাদিক
Add Comment