পাথরঘাটায় ভরা মৌসুমেও ইলিশ নেই জেলেদের জালে

ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগর ও নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় উপকূলের জেলে পরিবার অভাব-অনটন আর চরম হতাশার মধ্যে দিন পার করছেন। হাহাকার চলছে উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে। বঙ্গোপসাগর, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ইলিশকে ঘিরেই এখানকার জেলেদের জীবন ও জীবিকার চাকা ঘুরছে। ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও দেখা নেই রুপালি ইলিশের।

জানা গেছে, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন এ চার মাস ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও সমুদ্রে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ জেলেরা। অপর দিকে বৈরি আবহাওয়া থাকায় জেলেরা সাগরে ঠিকমতো মাছ ধরতে পারছেন না। সাগর কিংবা নদীতে জাল ফেলে দু-একটা ইলিশের দেখা পেলেও তা পরিবারের আহারেই চলে যায়। ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে ঋণ করে চলছে জেলেদের সংসার। এনজিওর লোন আর মহাজনের দাদনের ভাবনাই যেন জেলেদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা।

জেলেদের লোন ও দাদন দিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এনজিও এবং ব্যবসায়ীরাও। মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। তারা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু সারা দিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। হতাশায় এখন অনেক জেলেই নদীতে যাচ্ছেন না। নদীর তীরেও অনেকে নৌকায় বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন জেলেরা। বর্তমানে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, ঘাটে নোঙর করে আছে জেলেদের শতাধিক ট্রলার, বাজারে নেই ইলিশ। আড়তে অলস সময় পার করছেন আড়ৎদাররা। দু-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। বছরের এ ভরা মৌসুমে জেলেরা মহোৎসবে রুপালি ইলিশ ধরেন, ট্রলারভর্তি মাছ আসে অবতরণ কেন্দ্র। মাছ রাখতেই শুরু হয় হাঁকডাক। অবতরণ এলাকায় থাকে ক্রয়-বিক্রয়ের সরগরম। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ অবতরণ কেন্দ্রে আসার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনাবেচা নেই। ক্রেতারা অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন। 

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদী ও সমুদ্রে ইলিশ ধরা না পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন জেলেরা। দিন-রাত জাল ফেলে যে কয়টি মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচও হয় না। জেলেরা আরও জানান, অনেকে এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু ইলিশ ধরা না পড়ায় দেনাও শোধ করতে পারছেন না।

উপজেলার পদ্মা এলাকার জেলে কবির হোসেন জানান, এবার সাগরে মাছের দেখা মেলেনি। যে মাছ পেয়েছেন তাতে খরচের টাকা ওঠেনি। এতে দৈনিক খরচের তুলনায় আয় না হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। তাছাড়া বিনিয়োগ করে লোকসান গুনছেন আড়ৎদার ও দাদন ব্যবসায়ীসহ এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর বৈশাখ থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও এ বছর ভরা মৌসুমে দুমাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষেও সমুদ্রে ইলিশের মাছের দেখা মিলছে না।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে জেলেরা গভীর সমুদ্রে যেতে পারছে না। যে কারণে মনে হয় তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। আমরা আশা করি, অচিরেই রুপালি ইলিশ ধরা পড়বে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০