ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড

১০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ‘ইআরএল-২’ প্রকল্প

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে পরিশোধিত তেলের চাহিদা মেটাতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নতুন ফ্ল্যাট স্থাপনে জমি ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে। কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগসহ নানা জটিলতায় প্রায় ১০ বছর ধরে প্রকল্পটি স্থবির হয়ে আছে। প্রকল্পের অগ্রগতি শুধু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে সীমাবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির তিন বছর শেষ হলে আবারও বাড়ানো হয় মেয়াদ। রহস্যজনক কারণে থেমে আছে দেশের জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন!

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, করপোরেশনের মালিকানাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক তেল পরিশোধনের সক্ষমতা মাত্র ১৫ লাখ টন। অথচ দেশে মোট তেলের চাহিদা আছে ৬৫ লাখ থেকে ৭০ লাখ টনের। এর মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি পরিশোধিত প্রায় ১৫ লাখ তেল সরবরাহ করতে পারে। বাকিগুলো সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ৪৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করতে হয়। অথচ দেশে বছরের পরিশোধিত তেলের বাজার ৫০ লাখ টনের বেশি।

জানা যায়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিনির্ভরতা কমানো এবং দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল প্রক্রিয়াকরণ করে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের জন্য ‘ইআরএল ইউনিট-২’ নামে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় নতুন ফ্ল্যাট স্থাপনে জমি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপিসির কাছে প্রয়োজনীয় টাকা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগসহ নানা জটিলতায় প্রায় ১০ বছর ধরে প্রকল্পটি স্থবির হয়ে আছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রিফাইনারির বার্ষিক প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হতো। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় এ ব্যয়ও আরও বাড়তে পারে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ইআরএলের প্রথম তেল শোধনাগার ইউনিটটি নির্মাণ করেছিল ফরাসি প্রতিষ্ঠান টেকনিপ। ১৯৬৩ সালে উদ্যোগ নেওয়া হলেও ১৯৬৮ পরিশোধনাগারটি উৎপাদনে যায়। দ্বিতীয় ইউনিটটির নকশাও তৈরি করে টেকনিপ। এ কাজে ব্যয় হবে ৩২২ কোটি টাকা। আর প্রকল্পটির প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসাল্ট (পিএমসি) হিসেবে কাজ করছে ভারতের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড।  

২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ইআরএল ইউনিট-২-এর প্রজেক্ট কনসাল্ট প্রতিষ্ঠান ভারতের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে বিপিসির তিন বছর মেয়াদি চুক্তি হয়। যার চুক্তিমূল্য ছিল ১১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। গত বছরের ১৮ এপ্রিল এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ফলে মন্ত্রিপরিষদের ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির এক সভায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে চুক্তিমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলেন, মূলত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি কমাতে এবং দেশেই তেল পরিশোধন সক্ষমতা বাড়াতে ইআরএল ইউনিট-২ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিপিসি। বর্তমানে ইআরএলের পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন। আর ইআরএল ইউনিট-২-এর পরিশোধন ক্ষমতা হবে প্রথম ইউনিটের দ্বিগুণ বা ৩০ লাখ টন। দুটি ইউনিট মিলে পরিশোধন ক্ষমতা হবে ৪৫ লাখ টন। দেশে মোট জ্বালানি তেলের চাহিদা ৫০ থেকে ৬০ লাখ টন। ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট হলে দেশে মোট তেলের চাহিদার তিন-চতুর্থাংশই পূরণ করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতারুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, আগের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। কিছুদিন আগে তাদের সঙ্গে চুক্তি মেয়াদ শেষ হয়েছিল। মূলত করোনাভাইরাসের কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। এখন আবারও কাজ চলছে। এরপর ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তারপর ভৌত অবকাঠামো তৈরি কাজ শুরু হবে। কবে তা শুরু হবে এর উত্তর তিনি বলেন, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। প্রকল্পের ব্যয়ের উৎস নির্ধারিত হয়েছে কি? এ প্রকল্পে ব্যয় নির্বাহ করা হবে বিপিসির নিজস্ব তহবিল এবং সরকারি অর্থ।

উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। ইআরএলের প্রথম ইউনিট থেকে ১৭ ধরনের পেট্রোলিয়াম সামগ্রী উৎপাদন হয়। আর দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্পে থাকছে ১০টি প্রসেসিং ইউনিট।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০