সিপিডি-অক্সফামের জরিপ

প্রচারের ঘাটতিতে ত্রাণ বঞ্চিত অনেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে করোনাভাইরাস মহামারি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের বরাদ্দ সহায়তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃতি ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছায়নি বলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফামের সংক্ষিপ্ত এক মাঠ জরিপে উঠে এসেছে।

সম্প্রতি সিপিডি ও অক্সফামের উদ্যোগে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ত্রাণ ও নগদ সহায়তার জন্য তালিকাভুক্ত সুবিবধাভোগীদের টেলিফোন সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, যা গতকাল এক ভার্চুয়াল সংলাপে তুলে ধরেন গবেষক দলের নেতা মোস্তফা আমির সাব্বিহ।

গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া মহামারির দুর্যোগের মধ্যে চলতি জুলাই মাসে দেখা দেয় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকা দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনযাত্রায় নেমে আসে উভয় সংকট। এ পরিস্থিতিতে সরকার তালিকাভুক্ত অভাবী মানুষদের জন্য নগদ আড়াই হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা ও চাল বরাদ্দ নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ হওয়া সেই সহায়তা উদ্যোগ অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে না পৌঁছে বণ্টনের দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের কাছের লোকেরা পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ এর কারণে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন, যা মোট শ্রমশক্তির ২১ শতাংশ। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বন্যায় (১২-২১ জুলাই) রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় স্থলভাগের ২৯ শতাংশ তলিয়ে গেছে। এ প্রেক্ষাপটেই সরকার বিনা মূল্যে খাদ্য সহায়তা, নগদ সহায়তার মতো কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনেকে সময় ত্রাণের আড়াই হাজার টাকার জন্য এসএমএস এলেও পরে টাকা আসেনি। যাদের টাকা আসেনি তারা যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। অনেক ক্ষেত্রে অধিক অভাবী ও অতিদরিদ্র মানুষকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।

সংলাপে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কোন প্রক্রিয়ায় কাদেরকে ত্রাণ দেওয়া হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো প্রচারণা মাঠে ছিল না। সে কারণেই অনেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবার ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিরও সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক প্রচারণার কথা থাকলেও সরকারি কোনো সংস্থা তা করেনি।’

ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ভার্চুয়াল সংলাপে তোলা হলেও সেসব চ্যালেঞ্জ করেন উপস্থিত কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তা। তবে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি এনজিওকর্মীরা।

কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উলফৎ আরা বেগম বলেন, ‘মহামারি শুরুর পর থেকে ত্রাণ কিংবা অন্য কোনো তপৎরতা নিয়ে কোনো এনজিওকর্মী তার কাছে আসেননি। এমনকি তাদের মাঠেও দেখা যায়নি। কাউনিয়ায় একমাত্র আশা এনজিও। তারা ২০০ প্যাকেট ত্রাণ দিয়েছে, আর অক্সফাম থেকে দেওয়া হয়েছে ২০০ মাস্ক ও এক হাজার করে টাকা।’

তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়াদের যে মানবিক অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে সেটা কিন্তু অতিদরিদ্রদের জন্য না। উপজেলায় সব মিলিয়ে ১৩ হাজারের মতো অতিদরিদ্র মানুষের তালিকা রয়েছে যাদের জন্য পৃথক সহায়তার ব্যবস্থা আছে। যারা কোনো না কোনো সরকারি ত্রাণের তালিকায় রয়েছেন তাদেরও সেখানে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়নি। শুধু যারা লকডাউনের কারণে সাময়িক কর্মহীন হয়েছেন তাদের এ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখন কোনো দরিদ্র ব্যক্তি যদি মনে করেন তিনি আর্থিক সহায়তা পাননি, ওমুক মুদি দোকানি পেয়েছেন, সেটা তার ভুল ধারণা। কারণ নিয়মটা সেভাবেই করা হয়েছে।’

কাউনিয়ার একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বলেন, এক হাজার ১০০ লোককে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অথচ সেখানে ১১ হাজার মানুষকে দেওয়া উচিত ছিল। সেই কারণে অভিযোগ আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

রেনু বালা নামের একজন এনজিওকর্মী অভিযোগ করেন, ‘ত্রাণ দেওয়ার আগে ৯০০ ব্যক্তির কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের অর্ধেক মানুষও ত্রাণ কিংবা সহায়তা পাননি।’

রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে থাকতে পারেননি। সে কারণেও অনেক সমস্যা হয়তো হয়েছে। যে ৩০ জনের টেলিফোন ইন্টারভিউর মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেটাও পরিস্থিতির একটা অস্বাভাবিকতার প্রমাণ দেয়। আসলে এসব কারণেও কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০