রুট গ্রুপের বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের অভিযোগ

রহমত রহমান: রুট গ্রুপ অব কোম্পানিজ। তৈরি পোশাক, সুতা, সার, পোলট্রি ও মৎস্য খাদ্যসহ কয়েকটি খাতে এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রুপের দুটি বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার (শুল্কমুক্ত সুবিধা) অপব্যবহারের অভিযোগে পৃথক মামলা করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বন্ড কমিশনারেট অর্থদণ্ড প্রদান করে রায় দিয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে রানকা ডেনিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে বন্ডেড কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণের উদ্দেশ্যে মজুত করা এবং রানকা সোহেল কম্পোজিট টেক্সটাইলস মিলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে কাঁচামাল শুল্ককর পরিশোধ না করে অবৈধভাবে খালাস নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে বন্ড কমিশনারেট।

সূত্র জানায়, গ্রæপের টেক্সটাইল খাতের প্রতিষ্ঠান রানকা ডেনিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও রানকা সোহেল কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার মোল্লারচর এলাকায় অবস্থিত দুটি বন্ডেড প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বন্ড কমিশনারের নির্দেশে ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিশন) যাচাই ও পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বন্ড কমিশনারেট টিম ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই প্রতিষ্ঠান দুটি পরিদর্শন করে।

পরিদর্শনের সময় রানকা ডেনিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের বন্ডেড ওয়্যারহাউসে বন্ড রেজিস্টার অপেক্ষা ইয়ার্ন (সুতা) ৫৭ হাজার ৯৮৯ দশমিক সাত কেজি বেশি পায় পরিদর্শন টিম। এ কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণের উদ্দেশ্যে ওয়্যারহাউসে মজুত করা হয়েছে। এছাড়া ডাইস ১৭ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৬৭ কেজি ও কেমিক্যাল ৩৩ হাজার ৭৭০ দশমিক ২৩ কেজি কম পাওয়া যায়, যা অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়েছে। বন্ড সুবিধার ইয়ার্ন অবৈধভাবে অপসারণের জন্য মজুত ও ডাইস অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়েছে। ইয়ার্ন ও ডাইসের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য তিন কোটি ৬৫ লাখ সাত হাজার ৯৪৭ টাকা। শুল্ককর এক কোটি ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৩ টাকা।

অপরদিকে পরিদর্শন টিম রানকা সোহেল কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের বন্ডেড ওয়্যারহাউসে রেজিস্টার অপেক্ষা ৩১ হাজার ১৯০ দশমিক ৪৭ কেজি ডাইস কম পায়। এ ডাইস অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়েছে। ২৫ হাজার ১৪ দশমিক ২৪ কেজি কেমিক্যাল বেশি পাওয়া গেছে, যা অবৈধভাবে অপসারণের জন্য মজুত করা হয়েছে। এছাড়া বন্ডিং মেয়াদোত্তীর্ণ এক লাখ ২৮ হাজার ৮৮৮ কেজি লবণ পাওয়া গেছে। কম প্রাপ্ত ডাইস, বেশি প্রাপ্ত কেমিক্যাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ লবণের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য দুই কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫২ টাকা এবং শুল্ককর ৮০ লাখ ১৩ হাজার ৪৯ টাকা।

দুটি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর লিখিত জবাব দেয়। ৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শুনানিতে অংশ নিয়ে বিষয়টি পুনঃতদন্তের আবেদন করলে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি চলতি বছরের ২ জুলাই রানকা ডেনিম ও ৭ জুলাই রানকা সোহেল কম্পোজিটের প্রতিবেদন দেয়।

২৯ আগস্ট ২০২০ শনিবার দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকার লিড নিউজ

রানকা ডেনিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে জানিয়েছে সুতা বেশি পাওয়া, কেমিক্যাল ও ডাইস কম পাওয়া কাঁচামালের যে শুল্কায়ন করা হয়, তা সঠিক নয়। কর্তৃপক্ষ বলে, যে সুতা বেশি পাওয়া গেছে তা অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়নি। সুতার আমদানির সময় দেখানো হয়েছে ৫ মে ২০১৯, কিন্তু তা হবে ১৩ জুলাই ২০১৯। ১৩ জুলাই পর্যন্ত বন্ড সুবিধায় আমদানি কাঁচামালের তথ্য, সিআইএস সেলের রিপোর্ট, বন্ড রেজিস্টার, ইউপি যাচাই করে করে পরিদর্শন টিমের দেওয়া প্রতিবেদন ও প্রতিষ্ঠানের জবাব এবং দলিলাদি পর‌্যালোচনা করা হয়।

এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ওই সুতা অবৈধভাবে অপসারণে উদ্দেশ্যে মজুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউপি যাচাই করে দেখা  যায়, ওই সুতা প্রতিষ্ঠানটি আমদানি করেছে। এছাড়া যে দুটি কাঁচামাল কম পাওয়া গেছে, তা প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করে ফেলেছে। প্রতিষ্ঠানটির দুটি দাবিই সঠিক নয়। ফলে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় প্রতিষ্ঠানের কাছে শুল্ককর আদায়যোগ্য এবং কাস্টমস আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয়। বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে ৯ জুলাই আদেশ দেয় বন্ড কমিশনারেট। ১৫ দিনের মধ্যে প্রযোজ্য শুল্ককর ও অর্থদণ্ড সরকারি কোষাগারে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রানকা সোহেল কম্পোজিটের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের নোটিশের জবাবে উল্লেখ করেন, ৩১ হাজার ১৯০ দশমিক ৪৭ কেজি ডাইস কম পাওয়া এবং ২৫ হাজার ১৪ দশমিক ২৪ কেজি কেমিক্যাল বেশি পাওয়া কাঁচামালের শুল্কায়ন সঠিক নয়। কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণের উদ্দেশ্যে মজুত করা হয়নি। আমদানির সময় ৪ জুলাই ২০১৮ সঠিক নয়, সঠিক হবে ১৩ জুলাই ২০১৯।

১৩ জুলাই পর্যন্ত বন্ড সুবিধায় আমদানি কাঁচামালের তথ্য, সিআইএস সেলের রিপোর্ট, বন্ড রেজিস্টার, ইউপি যাচাই করে করে পরিদর্শন টিমের দেওয়া প্রতিবেদন ও প্রতিষ্ঠানের জবাব এবং দলিলাদি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বেশি পাওয়া ২৫ হাজার ১৪ দশমিক ২৪ কেজি কেমিক্যাল অবৈধভাবে অপসারণের জন্য মজুত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি সঠিক নয়। ৩১ হাজার ১৯০ দশমিক ৪৭ কেজি ডাইস ও এক লাখ ১৯ হাজার ৯৩৮ কেজি লবণ মজুত অপেক্ষা কম পাওয়া গেছে।

অবৈধভাবে অপসারিত ডাইস, অপসারণের উদ্দেশ্যে মজুত কেমিক্যাল এবং লবণের ওপর প্রযোজ্য ৮০ লাখ ১৩ হাজার ৪৯ টাকা প্রযোজ্য শুল্ককর আদায়যোগ্য। অবৈধভাবে মজুত ও অপসারণ কাস্টমস আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয়। বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে ৯ জুলাই আদেশ দেয় বন্ড কমিশনারেট। ১৫ দিনের মধ্যে প্রযোজ্য শুল্ককর ও অর্থদণ্ড সরকারি কোষাগারে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে রুট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাজ্জাকুল হোসেন টুটুল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমার দুটি প্রতিষ্ঠান এক জায়গায়। একসঙ্গে প্রতিষ্ঠান হলে কম-বেশি কীভাবে হবে? তবে অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়নি।’ বন্ড কমিশনারেটের আদেশে বলেছে, অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কথা শোনেননি। কার দোষ বলব না। আমরা আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছি।’

উল্লেখ্য, রুট গ্রুপ ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৯ সালে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে রানকা ডেনিম, রানকা সোহেল ছাড়াও রুট কটন ইয়ার্ন লিমিটেড, রুট ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড, রুট অ্যাপারেলস লিমিটেড, প্রিমিয়াম ফিডস লিমিটেড ও গ্রাম বাংলা ফার্টিলাইজার অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০