ওয়েবিনারে বক্তারা

বাংলাদেশে সব ধরনের বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারবে সিঙ্গাপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারির আগে বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং চলমান সংকট থাকা সত্তে¡ও দেশ দ্রুত অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এছাড়া হাই-টেক পার্ক জোন ও অর্থনৈতিক জোনগুলোতে বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে সরকার। তাই বাংলাদেশে বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারবে সিঙ্গাপুর।

সম্প্র্রতি ‘বাংলাদেশে ব্যবসায়িক সুযোগ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক শিরোনামে অনুষ্ঠিত একটি ওয়েবিনারে এ ধরনের মন্তব্য করেন বক্তারা। ওয়েবিনারে স্থানীয় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও সিঙ্গাপুরের অন্যান্য সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন (এসবিএফ), সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিআইডিএ), পাবলিক-প্রাইভেট সেক্টর ফেডারেশন (পিপিপিএ) ও এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে ওয়েবিনারটি আয়োজন করা হয়।

ওয়েবিনারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, চলমান উন্নয়ন ও বাংলাদেশে ব্যবসায়িক নানা সুযোগ সৃষ্টি এবং কভিড-১৯ পরবর্তী নিউ নরমাল অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

ওয়েবিনারে বাংলাদশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, এসবিএফ সাউথ-এশিয়া বিজনেসের ভাইস চেয়ারম্যান প্রসূন মুখার্জি বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সেক্টর প্লেনারি অধিবেশনের মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

বাংলাদেশে ব্যবসায়বান্ধব শাসন ব্যবস্থা ও বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মহামারির আগেও বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং চলমান সংকট থাকা সত্তে¡ও দেশটি যে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অর্থনৈতিক অবস্থা দ্রæত স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমরা হাই-টেক পার্ক জোন ও অর্থনৈতিক জোনগুলোতে বিশেষ সুযোগ দিচ্ছি। দেশে যে কোনো আইটি অবকাঠামোভিত্তিক বিনিয়োগের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাইবার অপটিক লাইনের সংযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন গ্যাস, পানির পর্যাপ্ত সরবরাহসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের প্রচুর উদ্বৃত্ত রয়েছে। এছাড়াও আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সার মার্কেট ও ক্রমবর্ধমান আইসিটি সেক্টর রয়েছে।’

বাংলাদেশে কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে মোকাবিলার কৌশল তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বর্তমান কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা পুরো বিশ্বজুড়ে বিরাজ করছে। মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার চারটি মূল অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপে ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অর্থ সঞ্চালনের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যয়, সামাজিক সুরক্ষা নেট প্রোগ্রামের আওতায় সাড়ে চার কোটি লোককে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ প্রদান, ব্যাংকিং তারল্য চার শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চার দশমিক ৭৫ শতাংশ করা, রেপো রেট চার শতাংশ করা এবং এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ ব্যবসা, রপ্তানি, কৃষি ও অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রকে সহযোগিতা করতে মোট ১২ দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার (জিডিপির তিন দশমিক সাত শতাংশ) মূল্যের ব্যাপক আর্থসামাজিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০-৫০ সমন্বয় তহবিলের মাধ্যমে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ঝুঁকি ঋণ চালু করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের বাইরে থাকা ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা, করপোরেট করের পাশাপাশি সব আয়কর হ্রাস করা হয়েছে।’

বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের একটি অনুক‚ল বিকল্প মাধ্যম হিসেবে নিশ্চিত করে সভাপতি আরও বলেন, এ ধরনের সমন্বিত ও ব্যাপক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। কারণ, ২০২০ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রবণতা প্রদর্শন করছে। কভিড-১৯ সংকট থাকা সত্তে¡ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি বেড়েছে পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ, রেমিট্যান্স পাঁচ দশমিক চার শতাংশ এবং ফরেক্স রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।

ফাহিম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগকৃত বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানির বৈশ্বিক শীর্ষ পাঁচ অপারেশনের মধ্যে তাদের বাংলাদেশে পরিচালিত কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। ১৬০০ মিলিয়ন দেশীয় বাজারের পাশাপাশি ভারতের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা, চীন, ইইউ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং সাফটার (১.৮ বিলিয়ন সার্ক মার্কেট) মাধ্যমে উৎপাদনের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার সঙ্গে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাজারের সুবিধা সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীরা নিতে পারবেন।’

বিআইডিএ’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্র, লাইট-ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর, বিনিয়োগের জন্য প্রযুক্তির মতো অসংখ্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য আমাদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে।’

ওয়েবিনারে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) পরিচালক মো. আরিফুল হক, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, পিএসএ মেরিনের সহকারী সহসভাপতি মি. স্যামুয়েল লি., এপেক্স গ্রæপের পরিচালক সৈয়দ নাসিম মনজুর, আমরা সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ফরহাদ আহমদ প্রমুখসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুযোগের কথা তুলে ধরেন।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০