আয়নাল হোসেন: করোনার থাবায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসার চরম মন্দার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ভাড়াটিয়ার খোঁজ পাচ্ছেন না ভবন মালিকরা। ফলে মাসের পর মাস খালি পড়ে রয়েছে অসংখ্য বাণিজ্যিক ভবন ও দোকানপাট। রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও কারওয়ান বাজার ছাড়াও গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য দোকানপাট ও বাণিজ্যিক ভবন খালি পড়ে রয়েছে। আবার বাণিজ্যিক ভবনগুলোর ভাড়াও অর্ধেকে নেমে গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গুলশান এক নম্বর গোলচত্বর-সংলগ্ন লোটাস কামাল টাওয়ারে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ছিল ১৬৮ টাকা। বর্তমানে তা কমিয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। এরপরও কাক্সিক্ষত ভাড়াটিয়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া গুলশানের উদয় টাওয়ারে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। বর্তমানে তা কমিয়ে ৮০ টাকা করা হলেও কোনো ভাড়াটিয়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে রাজধানীর ১৬ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার পঞ্চম ও ষষ্ঠতলার চার হাজার বর্গফুটের দুটি ফ্লোর ভাড়া দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পাঁচ মাস ধরে ভবনের দুটি ফ্লোর ভাড়া হচ্ছে না বলে আফাজ উদ্দিন নামে এক তত্ত্বাবধায়ক জানান। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বর্গফুট ১১০ টাকা দরে ফ্লোর দুটি ভাড়া দেওয়া হবে।
একইভাবে ১৪৮ মতিঝিলে অবস্থিত সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন ভাড়া দেওয়ার জন্য সাইনবোর্ড ঝুলছে ভবনের সামনে। মতিঝিলের বিসিআইআইসি ভবনে বড় আকারে ভাড়া দেওয়ার জন্য সাইনবোর্ড ঝুলছে। ৪২ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার সপ্তম ও অষ্টম তলার তিন হাজার ৮০০ বর্গফুট ভাড়া দেওয়ার জন্য সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। ২৯ দিলকুশার রাজ ভবনে বাণিজ্যিক ফ্লোর ভাড়া দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ৪৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার জামান চেম্বরের এক হাজার বর্গফুটের ফ্লোর ভাড়া দেওয়া হবে। ৬১ মতিঝিল রেড ক্রিসেন্ট হাউসের ১০ তলায় দুই হাজার ৩০০ বর্গফুটের বাণিজ্যিক ফ্লোর ভাড়া দেওয়ার জন্য ভবনের সামনে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।
অপরদিকে মৌচাক মার্কেটে একসময় একটি দোকান খালি হলে সেখানে শতাধিক ব্যবসায়ী দোকানটি ভাড়া নেওয়ার জন্য তদবির করতেন। এখন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের চরম অবস্থার কারণে মৌচাক মার্কেটেই অসংখ্য টু-লেট ঝুলছে। অপরদিকে অনলাইন মার্কেটিং চালু হওয়ায় অনেকেই ঘরে বসে কাক্সিক্ষত পণ্যটি পেয়ে যাচ্ছেন। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ার কারণে অনেকেই স্বল্প টাকায় পছন্দের ও মানসম্মত বাজার করতে বিদেশমুখী হচ্ছেন।
এভাবেই গতকাল রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, পল্টন, বিজয়নগর এলাকার সহস্রাধিক ভবনে অফিস, দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্পেস ভাড়া দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি ঝুলে রয়েছে। বিভিন্ন ভবন মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় ভাড়াটিয়াদের ব্যাপক চাপ ছিল। ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি টানানো না হলেও অনেকেই ভবন খালি রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু করোনার করাল গ্রাসে গত পাঁচ মাসেও ভাড়া নেওয়ার খোঁজে কেউ আসেনি।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বর্তমানে খুবই নাজুক অবস্থা। সরকারের নীতিমালার অভাব, অনলাইন মার্কেটিং ও ট্যাক্স-ভ্যাট আদায়ে জটিলতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের দুরবস্থা চলছে। সর্বোপরি করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবস্থা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। কোনো ব্যক্তি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পণ্য কিনলে তাকে কোনো ট্যাক্স-ভ্যাট দিতে হচ্ছে না। অথচ ব্যবসায়ীরা সেই পণ্য আমদানি করতে গেলে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা কম দামে বিদেশি পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। ট্যাক্স কমানো হলে সেখানে বেশি পরিমাণে আদায় করা সম্ভব হতো বলে জানান তিনি।
৪২ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার মহসিন গ্রুপের সপ্তম ও অষ্টম তলা ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে ওই ভবনের ব্যবস্থাপক আলী হোসেন জানান, নিচতলা প্রতি বর্গফুট ৭৩ টাকা। উপরে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েক মাস ধরে ভবনের দুটি ফ্লোর খালি পড়ে আছে।
একই ধরনের বক্তব্য ৬১ মতিঝিল রেড ক্রিসেন্ট হাউসের ব্যবস্থাপক মো. মানিকের। তিনি জানান, ভবনে তৃতীয়, ষষ্ঠ ও দশম তলা খালি রয়েছে। আগে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ছিল ৪৫ টাকা করোনার কারণে তা কমিয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না।