গ্রাহক ছাড়তে রাজি হচ্ছে না লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ

সাইফুল্লাহ আমান: গ্রাহক ছাড়তে রাজি হচ্ছে না লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ। একাধিকবার আবেদনের পরও লিঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের শেয়ার অন্য সিকিউরিটিজে স্থানান্তরের সুযোগ দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শেয়ার ট্রান্সফারের আবেদন উপেক্ষার মাধ্যমে গ্রাহকদের হয়রানি করছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রিন্সিপাল শাখা। দেশের অন্যতম এ সিকিউরিটিজের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা একাধিক গ্রাহক শেয়ার বিজের কাছে এ ধরনের অভিযোগ করেন।

এদিকে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের আর্থিক অবস্থা বিগত বছরের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিগত আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা অর্ধেকে নামার পাশাপাশি অন্যান্য সূচকেও পতন হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রিন্সিপাল শাখায় বেশকিছু গ্রাহকের শেয়ার আটকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক অধ্যাপক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি অভিযোগ করে শেয়ার বিজকে বলেন, গত মাসের ৩০ তারিখ তিনি আবেদন করেন শেয়ার স্থানান্তরের। লঙ্কাবাংলা থেকে এবি ব্যাংক সিকিউরিটিজে শেয়ার ট্রান্সফারের আবেদন করলেও লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ তার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ বিএসইসি আইনে বলা আছে, গ্রাহক শেয়ার ট্রান্সফারের আবেদন করলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এর সুরাহা করতে হবে। আইনে তিন দিনের কথা থাকলেও লঙ্কাবাংলা কর্তৃপক্ষ দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

অভিযোগকারী আরও বলেন, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজে ফোন দিয়ে কয়েকবার জানানোর পরেও তারা কোনো ধরনের রেসপন্স করেনি এবং এখন ফোনও রিসিভ করছেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। লংকাবাংলা  সিকিউরিটিজের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ১১ লাখ টাকার বিনিয়োগ করেছেন তিনি।

তার মতো এমন আরও বেশকিছু গ্রাহক শেয়ার ট্রান্সফারের আবেদন করলেও তাদের সঙ্গে একই আচরণ করা হচ্ছে বলেও জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ থেকে শেয়ার ট্রান্সফার করতে চাওয়া এমন এক গ্রাহকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পাওয়া যায় এর সত্যতা। ওই গ্রাহকও অভিযোগ করেন তার আবেদনের ১৫ দিন পার হয়ে গেলেও লংকাবাংলা কর্তৃপক্ষ তার শেয়ার হস্তান্তরে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার সাফফাত রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন কোনো অভিযোগ তার কাছে নেই। দেশের অন্যতম সিকিউরিটিজ হওয়ায় লঙ্কাবাংলার এমন অনেক আবেদন জমা হয়ে থাকে। এসব আবেদনের ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। কোনো কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছুটিতে থাকলে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তবে দুই সপ্তাহ লাগার কথা নয়।

এ বিষয়ে জানতে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও প্রিন্সিপাল শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদ এলাহীর সঙ্গে বিকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাত সাড়ে ৮টায় ফোন করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পরে একাধিকবার তার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এছাড়া তাকে একাধিকবার এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসির আইন অনুযায়ী, ‘যদি কোনো গ্রাহক শেয়ার সরিয়ে নেওয়ার আবেদন করে থাকেন, তবে তা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’ এক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইনের ব্যত্যয় ঘটলে লাইসেন্স বাতিলসহ ন্যূনতম এক লাখ থেকে যেকোনো অঙ্কের জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।

এদিকে গত বছর লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের আর্থিক অবস্থায় বড় ধরনের পতন হয়েছে। গত জুনে প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ৫৬ শতাংশ কমেছে। ওই বছর লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের নিট মুনাফা দাঁড়ায় ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছর লংকাবাংলা  সিকিউরিটিজের মুনাফা কমেছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। একই সঙ্গে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শেয়ারপ্রতি মুনাফাও (ইপিএস) কমেছে অর্ধেকের বেশি। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস ছিল এক টাকা ছয় পয়সা। গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ পয়সা।

মুনাফা পাশাপাশি লঙ্কাবাংলার আয়েও গত বছর বড় ধরনের পতন হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় দাঁড়ায় ১৫৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা ছিল ১৯৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এছাড়া গত বছর কোম্পানির ক্যাশ ফ্লোতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এ সময় লঙ্কাবাংলার নিট ক্যাশ ফ্লো দাঁড়ায় ১১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

এদিকে গত বছর লঙ্কা-বাংলা সিকিউরিটিজের সম্পদও অনেকটা কমেছে। এর মধ্যে নন-কারেন্ট (স্থায়ী) সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮৯ কোটি তিন লাখ টাকা ও কারেন্ট (অস্থায়ী) সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৯ সালে কোম্পানিটির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪ কোটি আট লাখ টাকা। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ১১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

লঙ্কাবাংলার দুর্বল আর্থিক অবস্থার কারণ জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার সাফফাত রেজা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০