পাঁচদোনা-ডাংগা-ঘোড়াশাল সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনকৃত দেশের কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গায় এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল একটি। এই অঞ্চলের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা মোড় থেকে ডাঙ্গা ১২ কিলোমিটার। এছাড়া ডাঙ্গা থেকে ঘোড়াশালে আট কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই ২০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার না করায় সেটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠানগুলোর ভারী শিল্পের অংধিকাংশই ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত। এ অঞ্চলের ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালামাল যাতায়াতের এই প্রধান সড়ক দিয়ে দৈনিক শতাধিক ভারী যানবাহন চলাচল করে থাকে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটায় ব্যবহƒত শতাধিক ট্রলি যাতায়াতের ফলে রাস্তায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই গর্তের ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই তাতে পানি জমে আস্তে আস্তে রাস্তার ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তিন বছর আগে সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হলে স্থানীয়ভাবে এর সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে সড়কটি বেহাল হতে থাকে। বর্তমানে এই ২০ কিলোমিটার সড়কে প্রায় কয়েক হাজার ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের চলাফেলায় মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সড়কটির এই বেহাল দশায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভারী যানবাহন চলাচলের পরিমাণও কমে গেছে। সড়কের দৃশ্যপটের এমনই অবস্থা যে, সাধারণ মানুষের হেঁটে ১০০ গজ যাওয়ার মতো অবস্থাও নেই। পুরো সড়কের বিটুমিন সম্পূর্ণভাবে উঠে গেছে। এখন সড়কটি লাল মাটি আর লাল রঙের পানিতে একাকার।

এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা থেকে ১২ কিলোমিটারের পথ ডাঙ্গা। এই সড়ক দিয়েই প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান চরকা টেক্সটাইল, প্রাণ গ্রুপের মাল্টি ইন্টারন্যাশনাল নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান, তাইহিও সিমেন্ট কারখানা, ক্যাপিটাল পেপার মিলসহ আরও বেশ কয়েকটি ভারী শিল্পকারখানার পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করে।

এছাড়া ডাঙ্গা থেকে আট কিলোমিটারের পথ ঘোড়াশাল। এর মধ্যে দেশের অন্যতম বাংলাদেশ জুটমিলস, পূবালী জুট মিলস, ক্যাপিটাল পেপার মিল, একুয়া রিফাইনারি লি., প্রাণ ফুড ফ্যাক্টরি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, বাংলা ফোন ও ইজি কোম্পানির প্রতিষ্ঠানসহ ছোট-বড় বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালামাল বোঝাইকৃত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলে ওই সড়ক ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তাই বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেট বাঁচাতে চালকরা মরণফাঁদ জেনেও এ  পথেই গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া কারখানাগুলোয় কর্মরত কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ সহ্য করে আসা-যাওয়া করছেন।

এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাস্তাটির কোনো সংস্কারকাজ হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে, রাস্তার অবস্থা তত খারাপ হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার বড় বড় গর্তে পানি ভরে পুকুরে পরিণত হয়। এজন্য প্রায়ই এসব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারী।

স্থানীয় ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই জানান, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল চার লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৮৬৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচদোনা-ডাঙ্গা এলাকার জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

এ বিষয়ে নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার বলেন, ‘শিগগিরই সড়কটি ইট দিয়ে সংস্কার করা হবে। রাস্তাটি সোজা করে নতুন প্ল্যান দিয়ে আবার একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এর অনুমোদন হলেই বাকি কাজ শুরু করা হবে। একটু দেরি হলেও ভালো একটি ফলাফল আসবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০