ইসমাইল আলী: চাহিদা না থাকলেও নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি বেশ কিছু কেন্দ্র প্রায়ই বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। তবে করোনার কারণে গত অর্থবছর এসব কেন্দ্রে উৎপাদন একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ছে অস্বাভাবিক পর্যায়ে। অদক্ষ যন্ত্রপাতির কারণে এসব কেন্দ্রের জ্বালানি ব্যয় অনেক বেশি। কেন্দ্রগুলোর পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থায়ী ব্যয়ও বেশি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, সরকারি খাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিল কুতুবদিয়া ডিজেল জেনারেটর প্লান্টটি। দ্বীপের স্থানীয় জনগণের চাহিদা মেটাতে মাত্র ২ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি সন্ধ্যার পর কয়েক ঘণ্টার জন্য চালু করা হয়। এতে কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর মাত্র ৪৫ হাজার ৩১৩ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
২০১৯-২০ অর্থবছর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জ্বালানি ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ২০৪ টাকা ৬৩ পয়সা। পাশাপাশি কেন্দ্রটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ছিল ইউনিটপ্রতি ১৬৫ টাকা ২২ পয়সা। আর বেতন-ভাতাসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির গড় স্থায়ী ব্যয় ছিল ৩৫৭ টাকা ২২ পয়সা। সব মিলিয়ে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ে ৭২৭ টাকা ৪৭ পয়সা। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এটি ইউনিটপ্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন ব্যয়ের রেকর্ড।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের একই ধরনের চিত্র খুলনায় স্থাপিত নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির। ২২৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় মাত্র ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, যা সক্ষমতার এক শতাংশেরও কম। ডিজেলচালিত এ কেন্দ্রটির ইউনিটপ্রতি জ্বালানি ব্যয় ছিল ২৭ টাকা ২৯ পয়সা এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ১০ টাকা ৪৪ পয়সা। তবে বেতন-ভাতাসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির স্থায়ী ব্যয় ছিল গড়ে ৪৯৫ টাকা ৬৪ পয়সা। সব মিলিয়ে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ে ৫৩৩ টাকা ৩৭ পয়সা।
এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টটি ১০০ মেগাওয়াটের। সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে এ কেন্দ্রে বছরে কমপক্ষে ৭২ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু গত অর্থবছর এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় মাত্র ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার মাত্র ১ শতাংশ। এতে ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রটিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ২৬১ টাকা ১৪ পয়সা। এর মধ্যে ইউনিটপ্রতি জ্বালানি ব্যয় ছিল ৬৩ টাকা ২১ পয়সা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৮৯ টাকা ৩৭ পয়সা এবং স্থায়ী ব্যয় ১০৮ টাকা ৫৭ পয়সা।
একই ধরনের চিত্র ডিজেলচালিত বরিশাল গ্যাস টারবাইন কেন্দ্রটির। ৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় মাত্র ১০ লাখ ৭২ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার ১ শতাংশেরও কম। এতে কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল ২৩৭ টাকা ৩৪ পয়সা। এর মধ্যে ইউনিটপ্রতি জ্বালানি ব্যয় ৪৯ টাকা পাঁচ পয়সা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৫৮ টাকা ৮৩ পয়সা এবং স্থায়ী ব্যয় ১২৯ টাকা ৪৬ পয়সা।
এদিকে হরিপুরে গ্যাসচালিত ৪০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে ১৮ লাখ ৮৪ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা সক্ষমতার মাত্র এক শতাংশ। এতে কেন্দ্রটিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১২০ টাকা ২৮ পয়সা। তবে গ্যাসচালিত হওয়ায় এক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যয় ছিল অনেক কম। উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় পুরোটাই গেছে কেন্দ্রটির স্থায়ী ব্যয় মেটাতে।
একইভাবে ভেড়ামারার ডিজেলচালিত ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর সক্ষমতার মাত্র এক শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এতে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ৯০ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর এজন্য ইউনিটপ্রতি ব্যয় পড়ে ১০৯ টাকা ১৬ পয়সা। এর মধ্যে জ্বালানি ব্যয় ছিল ২৯ টাকা ৯ পয়সা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৯৮ পয়সা এবং স্থায়ী ব্যয় ৭৯ টাকা ১০ পয়সা।
এর বাইরে গত অর্থবছর ফার্নেস অয়েলচালিত দাউদকান্দি পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৯৮ টাকা ৩৬ পয়সা। এ কেন্দ্রটিতে জ্বালানি ব্যয় ছিল ১৩ টাকা ৬১ পয়সা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৪১ টাকা ৩০ পয়সা এবং স্থায়ী ব্যয় ৪৩ টাকা ৪৫ পয়সা। আর ডিজেলচালিত রংপুর গ্যাস টারবাইন পাওয়ার স্টেশনে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল ৭১ টাকা ৯ পয়সা। এ কেন্দ্রটিতে জ্বালানি ব্যয় ছিল ৩৩ টাকা ৪৭ পয়সা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ১২ টাকা ৫৯ পয়সা এবং স্থায়ী ব্যয় ২৫ টাকা দুই পয়সা।