পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সম্মেলনে জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে প্রান্তিক ও হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ। সংখ্যাটি উপক্ষেণীয় নয়। যদিও জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে তা ০.৫ শতাংশেরও কম; কিন্তু আমাদের অর্থনীতির ভালো প্রবৃদ্ধির এ সময়টিতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের হতদরিদ্র অবস্থায় থাকার চিত্র সম্পদের সুষম বণ্টনের অভাবের দিকটিই তুলে ধরে। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, হতদরিদ্র ও প্রান্তিক এ মানুষদের অর্থনীতির মূলসে াতে আনতে না পারলে অর্থনীতি অর্থবহ ও টেকসই হবে না। তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ৯টি পেশার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে পারলে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। পেশাগুলো হচ্ছে: বেদে, জেলে, কামার, কুমার, তাঁতি, নাপিত, স্বর্ণকার, বাঁশ ও বেত প্রস্তুতকারক, কাঠমিস্ত্রি ও মিষ্টি প্রস্তুতকারক। ইতোমধ্যে তাদের অর্থনীতির মূলসে াতে নিয়ে আসার জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। আমরাও মনে করি, আকারে ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ পেশাগুলোর প্রতি মনোযোগ দিলে একদিকে যেমন তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে, তেমনি গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা। সব পেশাই যে সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিংবা সমভাবে জনজীবনে প্রভাব ফেলতে সক্ষম, তা অবশ্য নয়। পেশার সঠিক সংজ্ঞায়নও জরুরি। তাছাড়া প্রতিটি পেশাকে অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য একই ধরনের উদ্যোগ নিলে তা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। পেশার বৈশিষ্ট্য অনুসারে করণীয় যেমন আলাদাভাবে ঠিক করা দরকার, কিছু পেশার আদিপ্রকৃতি টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে কি না, তাও ভেবে দেখতে হবে। বাংলাদেশে জেলেরা যে প্রক্রিয়ায় নদীনালা, খালবিলে মাছ ধরে, তা টিকিয়ে রেখে তাদের মূলসে াতে নিয়ে আসা কতটুকু সম্ভব, তা অবশ্যই ভেবে দেখা প্রয়োজন। এ পেশাতেই আধুনিক উপকরণ ও পদ্ধতি আপগ্রেডেশনের সুযোগ রয়েছে। অপরদিকে স্বর্ণকার পেশাকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। স্বর্ণের দোকানের মালিক যেমন স্বর্ণকার, তেমনি যারা গহনা তৈরির কাজ করেন, তারাও স্বর্ণকার। অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকেই দুটি আসলে আলাদা গোষ্ঠী। স্বর্ণের দোকানের মালিকের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়ার কথা নয়; অপরদিকে দোকানে কর্মরত ব্যক্তি মাসিক মজুরিতে কাজ করলেও তার পেশা আসলে চাকরি। সুতরাং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো উদ্যোগ নিতে হলে পেশার বৈশিষ্ট্য ভাবনায় রেখে সে আলোকে লাগসই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকার সে ভাবনা থেকেই এগোচ্ছে বলে আমরা আস্থা রাখতে চাই।
প্রান্তিক মানুষের জন্য বেসরকারি পর্যায়েও কাজ হয়ে থাকে। একই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে একই সময়ে গৃহীত একাধিক উদ্যোগ কার্যকর নাও হতে পারে। আমরা আশা করবো, যারা যেভাবেই কাজ করুক না কেন, সরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে পরিকল্পনা অনুসারে কাজের দ্রুত বাস্তবায়ন ঘটাবে। ২০২১ সালে এদেশে প্রান্তিক বা হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী থাকবে না এ আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই আমরা।
Add Comment