ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে বিক্রেতার আকাল

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পুঁজিবাজার। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখে এই বাজারে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের ফলে তৈরি হচ্ছে শেয়ার কেনার প্রতিয়োগিতা। এ কারণে তুঙ্গে উঠেছে কিছু শেয়ারের চাহিদা, যার জের ধরে বর্তমানে লেনদেন শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে এসব কোম্পানির শেয়ারের বিক্রেতাকে উধাও হয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।

শেয়ার ক্রয়ের প্রতিযোগিতার কারণে গতকালও আটটি প্রতিষ্ঠানকে বিক্রেতাশূন্য দেখা যায়। কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑইউনাইডেট এয়ারওয়েজ, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, ফ্যামিলিটেক্স, জাহিনটেক্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ও জেনারেশন নেক্সট। গতকাল লেনদেন শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে এসব শেয়ারে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা যায়। ফলে বিক্রেতাদের চাহিদাও বেড়ে যায়। আগামীতে দর আরও বাড়বে, এটা ভেবে বিক্রেতারা অনেকেই বিক্রয় আদেশ তুলে নেন, যার জের ধরে বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে এসব কোম্পানির শেয়ারে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে অন্তত ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, আগের কার্যদিবসগুলোয় বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়া কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑমুন্নু সিরামিক, বিআইএফসি, জিএসপি ফাইন্যান্স, শ্যামপুর সুগার, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন সন, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, জুট স্পিনার্স, জিল বাংলা সুগার, ইমাম বাটন, এমারাল্ড অয়েল, মিথুন নিটিং, শাইনপুকুর সিরামিক, তাল্লু স্পিনিং, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, তুংহাই নিটিং, কেয়া কসমেটিকস, ম্যাকসন স্পিনিং, আরএন স্পিনিং ও জেনারেশন নেক্সট। এর মধ্যে কিছু কোম্পানির শেয়ার একাধিক দিন বিক্রেতাশূন্য দেখা যায়। এসব কোম্পানির মধ্যে জিল বাংলা সুগারের শেয়ার লেনদেন বন্ধ করেছে বিএসইসি।

মূলত কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে লেনদেন স্থগিত করে বিএসইসি। কমিশন মনে করে, এ প্রতিষ্ঠানটির দর বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে কিছু অসাধু বিনিয়োগকারীরা। তারা কৃত্রিমভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দর বাড়িয়েছে। কারসাজি করা চক্রটি যাতে উচ্চ মূল্যে শেয়ার বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি কোনো কারণ ছাড়াই এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বাড়তে শুরু করে। মাত্র ৪১ কার্যদিবসের মধ্যে শেয়ারটির দর বাড়তে দেখা যায় ৪০০ শতাংশের বেশি। তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এই শেয়ারদর ৩১ টাকা বেড়ে ২১৮ টাকায় চলে যায়।

এদিকে বর্তমানে যেসব কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে কিংবা বিক্রেতা থাকছে না, এসব শেয়ারে জিল বাংলা সুগারের মতো ঘটনা ঘটছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি যেসব কোম্পানির শেয়ারদর বেশি বাড়ছে, তার অধিকাংশই কম দরের শেয়ার। পাশাপাশি কিছু বেশি দরের শেয়ারও বিক্রেতাশূন্য দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করার আগে বিনিয়োগকারীদের আরও হিসাবি হতে হবে। কারণ পুঁজিবাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী থাকে, তখন এখান থেকে সুবিধা গ্রহণ করার জন্য কিছু লোক মুখিয়ে থাকে। তারা ছোট-বড় সব ধরনের কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করতে পারেন। তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীদের একটি কথা মাথায় রাখা দরকার তা হচ্ছে পুঁজি তার, তাই এর নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্বও তার। দর বাড়লেও যে কোম্পানিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ এড়িয়ে চলা উচিত।

একই প্রসঙ্গে একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এখন বাজার মনিটরিং আগের চেয়ে ভালো। তবে এটা আরও জোরদার করতে হবে। এরই মধ্যে বাজারে গেম্বলার ঢুকে পড়েছে। তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০