গাড়িচালক আবদুল মালেক ১৪ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক ওরফে মালেক ড্রাইভারকে পৃথক দুই মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

তুরাগ থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে অবৈধ অস্ত্র ও জালটাকার ব্যবসার মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন মালেক ড্রাইভারকে। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী জিএম মিজানুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

এর আগে আবদুল মালেককে বেলা ২টায় আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ৩টায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৭ এর এজলাসে হাজির করা হয় তাকে। তারপর শুনানি শুরু হয়।

এর আগে গত রোববার রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়াস্থ ৪২ নম্বর বামনেরটেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জালটাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সে তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালেক জানান, তিনি পেশায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের একজন ড্রাইভার এবং তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি। তিনি ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাততলা বিলাসবহুল ভবন আছে। ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় চার দশমিক পাঁচ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন আছে এবং দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়।

জানা গেছে, মালেক ড্রাইভার দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়া রমজান মার্কেটের উত্তর পাশে ছয় কাঠা জায়গার ওপর সাততলার (হাজী কমপ্লেক্স) দুটি আবাসিক বিল্ডিং রয়েছে। যাতে মোট ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া আনুমানিক আরও ১০/১২ কাঠার প্লট রয়েছে। বর্তমানে সপরিবারে এ ভবনেরই তৃতীয়তলায় বসবাস করেন মালেক। বাকি ফ্ল্যাটগুলোর কয়েকটি ভাড়া দেওয়া রয়েছে।

জানা গেছে, ড্রাইভার মালেকের মেয়ে বেবির নামে দক্ষিণ কামারপাড়া, ৭০, রাজাবাড়ী হোল্ডিংয়ে প্রায় ১৫ কাঠা জায়গার ওপর ‘ইমন ডেইরি ফার্ম’ নামে একটি গরুর খামার রয়েছে। সেখানে প্রায় ৫০টি বাছুরসহ গাভী রয়েছে।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজে সেই সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন। এ পদের ক্ষমতাবলে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভারদের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন। ড্রাইভারদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির নামে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতেন। এছাড়া তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনকে জিম্মি করে বিভিন্ন ডাক্তারদের বদলি ও পদোন্নতি এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছেন।

জানা গেছে, ড্রাইভার মালেক তার মেয়ে নৌরিন সুলতানা বেলিকে অফিস সহকারী পদে, ভাই আবদুল খালেককে অফিস সহায়ক পদে, ভাতিজা আবদুল হাকিমকে অফিস সহায়ক পদে, বড় মেয়ে বেবির স্বামী রতনকে ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে, ভাগ্নে সোহেল শিকারীকে ড্রাইভার পদে, ভায়রা মাহবুবকে ড্রাইভার পদে, নিকটাত্মীয় কামাল পাশাকে অফিস সহায়ক পদে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাকরি দিয়েছেন।

মালেক নিজে গাড়িচালক হলেও মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত একটা সাদা পাজেরো জিপ গাড়ি (গাড়ি নং ঢাকা মেট্রো গ-১৩-২৯৭৯) নিয়মিত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন। মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত পাজেরো গাড়ি ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরও দুটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন। এরমধ্যে একটি পিকআপ গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩-৭০০১) তিনি নিজের গরুর খামারের দুধ বিক্রি এবং মেয়ের জামাইয়ের পরিচালিত ক্যান্টিনের মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করতেন। অপর একটি মাইক্রোবাস (গাড়ি নং ঢাকা মেট্রো  চ- ৫৩-৬৭৪১) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যবহার করতেন। জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম গত বছরের ২২ অক্টোবর তাকে দুদকে তলব করেন। তবে তার বিরুদ্ধে দুদক এখনও অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০