চামড়া খাতের উন্নয়ন ওয়েবিনারে বক্তারা

১৬ বছরেও উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের

নিজস্ব প্রতিবেদক: চামড়া প্রক্রিয়াতজাতকরণের উদ্দেশ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারের ট্যানারি পল্লিতে শিল্প প্লট স্থানান্তর হয়েছে। কিন্তু এরপরও পরিবেশগত উন্নয়ন না হওয়ায় বিশ্বে চামড়াশিল্পে বাংলাদেশ ইমেজ সংকটে ভুগছে। সিইটিপি এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। চামড়া খাতের উন্নয়নে পৃথক সংস্থা চেয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল দেশের চামড়া খাত নিয়ে ‘কভিড-পরবর্তী বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন এ খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা। ওয়েবিনারটির আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (রেপিড) এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। সেমিনারটিতে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় দেশের চামড়াশিল্প ও বৈশ্বিক বাজার নিয়ে। এতে উঠে আসে করোনাকালে এ শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাবের চিত্রটিও। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশের চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত অগ্রগতি হচ্ছে না। এজন্য সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও অনেকাংশে দায়ী। এজন্য পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এ খাতের উন্নয়নে একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সালমান এফ রহমান সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে বলেন, তারা ঠিকমতো কাজ করেনি। এছাড়া প্রকল্পটি ব্যবহার উপযোগী হওয়ার আগেই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারিগুলো যেতে বাধ্য হওয়ায় সমস্যা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর গিয়েও দেখলাম সিইটিপিসহ (কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার) প্রকল্পের কোনো কিছুই প্রস্তুত হয়নি। এ সময় তিনি প্রকল্পে বর্তমানে মাত্রাতিরিক্ত পানির ব্যবহার হচ্ছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এটি নিয়ন্ত্রণে না এলে আমরা পানির ওপর কর আরোপে বাধ্য হব। এছাড়া চামড়া শিল্পের উন্নয়নে ভিয়েতনামের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা এবং রপ্তানি পণ্যে চামড়া ও চামড়াবিহীন পণ্য আলাদা করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

বাণিজ্য সচিব ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন বলেন, চামড়াশিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রপ্তানি খাত। এ খাতে প্রত্যেক্ষভাবে তিন লাখ এবং পরোক্ষভাবে ছয় লাখ লোক নিয়োজিত রয়েছে। সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর সিইপিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে লকডাউনের সময়েও আমরা কাজ করেছি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাপেক্স গ্রুপের প্রধান সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, চামড়াজাত পণ্যের কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। অথচ ভিয়েতনাম কাঁচামাল না থাকা সত্ত্বেও এ খাতের রপ্তানিতে বহুদূর এগিয়ে গেছে। এ খাতের উন্নয়নে একক সংস্থার ওপর দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, ‘চামড়াশিল্প আমাদের নিজস্ব শিল্প, এই শিল্পের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমাদের দেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু এই শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।’

এ সময় বক্তারা প্রায় এক যুগেও সাভারের চামড়াশিল্প নগরী যথাযথভাবে প্রস্তুত না হওয়া, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং বর্জ্য পাশের ধলেশ্বরী নদীতে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণ এবং এসব কারণে আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠানের (এলডব্লিওজি) সনদ না পাওয়ার মতো বিষয়টি তুলে ধরে এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন।

বিশেষত বর্তমান বাস্তবতায় প্রকল্পটি এখন একটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। এ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত হিসেবে এ খাতের ভবিষ্যৎ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে দ্রুত ও যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

ওয়েবিনার আয়োজনে সহযোগিতা করে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (রেপিড) এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক ও নির্বাহী পরিচালক ড. আবু ইউসুফ। ইআরএফ সভাপতির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের এদেশীয় প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বিটিএর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, বিএফএলএলএফইএ’র সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন প্রমুখ।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০