নিজস্ব প্রতিবেদক: এসআর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি। রাজধানীর গুলশান-২, যমুনা ফিউচার পার্ক ও ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকায় তিনটি রেস্টুরেন্টের অবস্থান। তিনটি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ কোটি টাকার গোপন বিক্রির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর মাধ্যমে তিনটি রেস্টুরেন্ট প্রায় তিন কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে তিনটি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে একই গ্রুপের ফুড ভিলেজ ও ফুড ভিলেজ প্লাসের ২০০ কোটি টাকার গোপন বিক্রির তথ্য উদ্ঘাটন ও সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
ড. মইনুল খান বলেন, ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল নিকুঞ্জ-১ এর ৪৬ লেকড্রাইভের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার ও ফেরদৌসী মাহবুব নেতৃত্ব দেন। এতে এসআর গ্রুপের মালিকানাধীন দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরির এই তিনটি রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য ব্যবসার গোপন দলিলাদি জব্দ করা হয়। এই তিনটি রেস্টুরেন্ট রাজধানীর গুলশান-২, যমুনা ফিউচার পার্ক ও ধানমণ্ডিতে অবস্থিত। এসআর গ্রুপের মালিক বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
গোয়েন্দার প্রাথমিক অনুসন্ধান অনুযায়ী, এসআর গ্রুপ, ৪৬, লেক রোড, নিকুঞ্জ-১, ঢাকার কম্পিউটার থেকে জব্দকৃত ওই তিনটি রেস্টুরেন্টের প্রকৃত সেবামূল্য পাওয়া যায় ২০ কোটি ৫৩ লাখ ২৮ হাজার ২৩৭ টাকা। কিন্তু তাদের দাখিলপত্রে প্রদর্শিত মোট বিক্রয়মূল্য পাঁচ কোটি ৭১ লাখ ৮৪ হাজার দুই টাকা। ফাঁকি দেওয়া বিক্রয়মূল্যের পরিমাণ ১৪ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার ২৩৫ টাকা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের দাখিলপত্রে পরিশোধিত মোট ভ্যাট ৭৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৫ টাকা। মোট ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট দুই কোটি ১০ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪৩ টাকা। ভ্যাট আইন অনুযায়ী, সময়মতো সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ায় মাসিক দুই শতাংশ হারে মোট আরোপিত সুদ ৮০ লাখ ২৯ হাজার ৩৬৯ টাকা।
অনুসন্ধানে মোট মূসক ও সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ ৮৪ হাজার ৩১১ টাকা। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক হিসাব অনুসারে, দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি, সামসুদ্দিন ম্যানশন (পঞ্চম তলা), গুলশান নর্থ সি/এ, ঢাকা (সময়কাল: অক্টোবর ২০১৭ থেকে আগস্ট ২০২০) দাখিলপত্রে প্রদর্শিত বিক্রয়মূল্য দুই কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৩ টাকা ও দাখিলপত্রের মাধ্যমে পরিশোধিত মূসক ৩০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৮ টাকা। জব্দকৃত কাগজপত্র অনুসারে প্রকৃত বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় ৯ কোটি দুই লাখ ৯৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। এতে পরিহারকৃত মূসক বের হয় এক কোটি পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৫ টাকা এবং মাসিক দুই শতাংশ হারে সুদ ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৪ টাকা। মূসক ও সুদসহ পরিহারকৃত রাজস্ব এক কোটি ৪০ লাখ পাঁচ হাজার ৩৬৮ টাকা।
দ্বিতীয়টি, দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি, শপ নং-১, সি-০৩৭, প্রথম ফ্লোর, যমুনা ফিউচার পার্ক, ঢাকা (সময়কাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২০) কর্তৃক দাখিলপত্রে প্রদর্শিত বিক্রয়মূল্য দুই কোটি ৭০ লাখ ৮২ হাজার ১১৯ টাকা ও দাখিলপত্রে পরিশোধিত মূসক ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৯৫৭ টাকা। জব্দকৃত তথ্যমতে, এই শাখার প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ১০ কোটি ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৫ টাকা। এতে দেখা যায়, পরিহারকৃত মূসক ৯৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭৯ টাকা এবং মাসিক দুই শতাংশ হারে সুদ ৪৫ লাখ ৯ হাজার ১০৭ টাকা। যমুনা ফিউচার পার্কের এই রেস্টুরেন্টে মূসক ও সুদসহ পরিহারকৃত মূসক এক কোটি ৪২ লাখ ৪ হাজার ৬৮৬ টাকা।
তৃতীয় শাখাটি দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি, প্লট নং-৪১, ইম্পেরিয়াল আমীন আহেমদ সেন্টার (সপ্তম তলা), বাড়ি ৫৪, রোড-১০/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকায় অবস্থিত। অনুসন্ধানে দেখা যায় (সময়কাল: নভেম্বর ২০১৯ থেকে আগস্ট ২০২০) তাদের দাখিলপত্রে প্রদর্শিত বিক্রয়মূল্য ৬৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯০ টাকা ও দাখিলপত্রের মাধ্যমে পরিশোধিত মূসক আট লাখ ৭৯ হাজার ৭৬৮ টাকা। তবে উদ্ধার করা তথ্যে পাওয়া যায়, প্রকৃত বিক্রয়মূল্য এক কোটি ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২৭ টাকা। এতে পরিহারকৃত মূসকের পরিমাণ আট লাখ সাত হাজার ৫৭৯ টাকা এবং সুদ ৬৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। ধানমন্ডির এই শাখায় মূসক ও সুদসহ পরিহারকৃত রাজস্বের পরিমাণ আট লাখ ৭৪ হাজার ২৫৭ টাকা। এই শাখায় আগে ভ্যাট গোয়েন্দা একটি ভ্যাট ফাঁকির মামলা দায়ের করেছিল।
ড. মইনুল খান জানান, এসআর গ্রুপের এই তিনটি রেস্টুরেন্টের ১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন গোপন এবং দুই কোটি ৯১ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির দায়ে এসআর গ্রুপের ওই তিনটি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এর আগে একই গ্রুপের ঢাকা-রংপুর হাইওয়েতে ফুড ভিলেজ ও ফুড ভিলেজ প্লাসের ২০০ কোটি টাকার গোপন লেনদেনের হিসাব উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে।