মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: কোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই বেশ কিছুদিন ধরে রিজেন্ট টেক্সটাইল ও হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলের শেয়ারদর বাড়ছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে বিবেচিত হওয়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে উভয় প্রতিষ্ঠানকেই দুই দফা দর বৃদ্ধির কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। জবাবে দর বাড়ার নেপথ্যে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে কোম্পানি দুটি জানিয়েছে। এদিকে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না থাকলেও কোম্পানি দুটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে পরিচালকদের ইন্ধন থাকতে পারেÑএমন অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফা নোটিস দেওয়ার বিষয়টিকে অতিমূল্যায়িত শেয়ারের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিএসই’র এক ধরনের ‘সতর্ক বার্তা’ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, শেয়ারদর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলকে ৬ ও ১২ এপ্রিল এবং রিজেন্ট টেক্সটাইলকে ১০ ও ১২ এপ্রিল দুই দফা চিঠি দিয়েছে ডিএসই।
শেয়ারদর বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রিজেন্ট টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব রিয়াজুল হক শিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শেয়ারদর কেন বাড়ছেÑসে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি আমাদের কাছেই চমক বলে মনে হচ্ছে। দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কিংবা অন্য যে কোনো তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা ডিএসই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিই। বর্তমানে আমাদের কাছে সে রকম কোনো তথ্য নেই।’
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিবেশ অনুকূলে এলেই কিছু কোম্পানির শেয়ার ‘অতিমূল্যায়িত’ হয়ে পড়ে। বর্তমানে বাজারে কিছু কোম্পানির শেয়ার ইতোমধ্যে ‘অতি মূল্যায়িত’ হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ ‘অতিমূল্যায়িত’ শেয়ারের ফাঁদে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। এসব শেয়ারের বিনিয়োগ তাদের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না।
ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পুঁজি যার, তাকেই সে পুঁজির নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। এক অর্থে বাজার সব সময়ই ভালো, আবার সব সময়ই খারাপ। এর মধ্যে থেকেই বিনিয়োগকারীদের দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে।’
ডিএসই’র পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি এবং যে শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়নি, সেসব শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই বিনিয়োগকারীরা এসব কথায় কান না দিয়ে অন্যের কথায় বিনিয়োগ করেন। ফলে এক সময় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
লেনদেনচিত্র লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এক মাস আগে রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর ছিল ২০ টাকা ৯০ পয়সা। সর্বশেষ গতকাল বুধবার এ শেয়ার ৩১ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দর বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।
রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর বাড়া প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বলেন, এ কোম্পানির পরিচালকদের কাছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার রয়েছে (৫৪.৫৪ শতাংশ); তাই অস্বাভাবিক হারে দর বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে পরিচালকদের ইন্ধন থাকতে পারে। এভাবে দর বাড়িয়ে তারা নিজেদের শেয়ার বিক্রির পাঁয়তারা করছেন। কোম্পানির বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৬.১৮ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৯.২৮ শতাংশ শেয়ার। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের বর্তমান পিই ৩০.৭৮।
অন্যদিকে হাক্কানী পাল্পের শেয়ারদর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১৩ টাকা। এক মাস আগে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ারদর ছিল ৫০ টাকা। গতকাল এর লেনদেন হয় ৬২ টাকা ৫০ পয়সায়।
আর্থিক অবস্থা নাজুক থাকায় গত পাঁচ বছর ধরে পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে কোনোরকম ক্যাটাগরি টিকিয়ে রেখেছে লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়েছে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা। রিজেন্ট টেক্সটাইলের মতো এ কোম্পানিরও সিংহভাগ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের কাছে। যার পরিমাণ ৫২.৫২ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৩৬.১৬ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৮.৩২ শতাংশ শেয়ার।
Add Comment