অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও সুমনের ২০ বছরের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন।

আলোচিত এ দম্পতির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যে চারটি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে অস্ত্র আইনের এ মামলাতেই সবার আগে রায় এলো। এর মধ্যে অস্ত্র আইনের ১৯-এর ‘এ’ ধারায় অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে পাপিয়া ও সুমনকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর ১৯-এর ‘এফ’ ধারায় অবৈধভাবে গুলি রাখার দায়ে দেওয়া হয়েছে সাত বছরের কারাদণ্ড। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে এ দম্পতিকে মোট ২০ বছরের সাজাই খাটতে হবে।

রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় পাপিয়া ও সুমনের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছিল। তবে রায়ে বিচারক বলেছেন, পাপিয়া নারী বলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়নি। তার স্বামীকেও একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বিচারক তার পযর্বেক্ষণে বলেন, শামিমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন সজ্জন রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তাদের বাসা থেকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়, যার কোনো বৈধতা থাকতে পারে না। এত টাকা থাকার কোনো যুক্তিও থাকতে পারে না। তারা তথাকথিত রাজনীতিবিদ। নিজেদের প্রাপ্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। দেশ ও জনগণের কল্যাণে তারা তো নিয়োজিত ছিলেনই না বরং দেশের জন্য তারা মারাত্মক বিপজ্জনক ছিলেন। যে কোনো অন্যায় কাজে লাগানোর জন্য তারা তাদের খাটের তোষকের তলায় একটি বিদেশি পিস্তল দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি রেখেছিলেন। এ অবৈধ অস্ত্র ও গুলি তাদের নিয়ন্ত্রণ, দখল ও জ্ঞানের মধ্যে ছিল।

রায়ের জন্য গতকাল পাপিয়া ও তার স্বামীকে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। সাজা ঘোষণার পর তাদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ভাবান্তর দেখা যায়নি। তবে পাপিয়ার আইনজীবী সাখাওয়াতউল্যাহ ভূঁইয়া ও সুমনের আইনজীবী এএফএম গোলাম ফাত্তাহ বলেছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জালনোট, ১১ হাজার ৪৮১ ডলার, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কিছু মুদ্রা এবং দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।

পরে পাপিয়ার ফার্মগেটের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০টি গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব। অভিযান চালানো হয় পাপিয়ার নরসিংদীর বাড়িতেও। র‌্যাবের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটির টাকার ওপরে।

গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র‌্যাব। বিমানবন্দর থানায়ও তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আর মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে। এরপর দুদকও পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে। এর মধ্যে শেরেবাংলা নগর থানার অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় গত ২৯ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দেন র‌্যাবের দায়িত্বরত উপপরিদর্শক আরিফুজ্জামান।

২৩ আগস্ট অস্ত্র মামলায় অভিযোগ গঠন করে ঢাকা মহানগরের এক নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ পাপিয়া ও সুমনের বিচার শুরুর আদেশ দেন। দু’পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিচারক রায়ের জন্য ১২ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০