টেক্সটাইল খাতে ডুবছে অগ্রণী ব্যাংক

জয়নাল আবেদিন: দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের বোঝা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। ঋণখেলাপির দিক থেকে চতুর্থ স্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের বেশিরভাগ টাকাই আটকে আছে টেক্সটাইল খাতে। বিশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকটির মোট খেলাপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এখন মাত্র ১৩ জনের কব্জায়, অঙ্কে যার পরিমাণ এক হাজার ১৭৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে টেক্সটাইল খাতের ৯টি কোম্পানির কাছে আটকে আছে ৭৫৬ কোটি ৯৪ লাখ এবং বাকি চারটির কাছে ৪৩২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

টেক্সটাইল খাতের খেলাপিদের মধ্যে রয়েছে এমআর সোয়েটার কম্পোজিট লিমিটেড। চলতি বছরের আগস্ট শেষে কোম্পানিটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ২০১৭ সাল থেকে ঋণটি মন্দ মানের খেলাপির খাতায়। দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিলের জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট দিতে রাজি হয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে এখনও পুনঃতফসিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অগ্রণী ব্যাংক। একই অবস্থা জুলিয়া সোয়েটার কম্পোজিট লিমিটেডের। ঋণ পুনঃতফসিলে জন্য পর্যাপ্ত ডাউন পেমেন্ট দিতে রাজি হয়নি জুলিয়া কম্পোজিট। এর ফলে ২০১৭ সাল থেকে ৯৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুস্পষ্ট ইচ্ছাকৃত খেলাপির লক্ষণ। দ্রুত এসব গ্রাহকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ব্যাংকাররা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি করে দেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ, কিন্তু আদায় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ডুবতে বসেছে ব্যাংক খাত। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দিচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ আদান-প্রদান করছেন। এছাড়া ঋণ বিতরণে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। যাচাই-বাছাই না করেই দেওয়া হচ্ছে ঋণ। বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠন করা ঋণ আবার খেলাপি হচ্ছে। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।

অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি হওয়া টেক্সটাইল খাতের অন্য কোম্পানিগুলো হলোÑপ্যাসিফিক ডেনিম, ওয়েস্টেরিয়া টেক্সটাইল লিমিটেড, সাত্তার টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, নাবিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, যীল টেক্সটাইল লিমিটেড, মিলন টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেড এবং জয় কম্পোজিট প্রোডাক্ট লিমিটেড। শীর্ষ ১৩ খেলাপির মধ্যে বাকি চারটি প্রতিষ্ঠান হলোÑআর্থ এগ্রো ফার্ম লিমিটেড, পাটোয়ারী পটেটো ফ্ল্যাক্স, আর কে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড এবং মেসার্স ফেরদৌস জুট মিলস লিমিটেড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছয় হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ মানের খেলাপিতে পরিণত হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির প্রায় ৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে ২০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল অগ্রণী ব্যাংকের। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ছয় কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তিন দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যান্য খেলাপিদের থেকে একই সময়ে ৪০০ কোটি টাকা নগদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নির্ধারিত ছয় মাস শেষে আদায় হয়েছে মাত্র ৬৮ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত ক্যাশ রিকভারির ১৭ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নতুন করে চার হাজার ৪২০ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিইও) মোহম্মদ শামস উল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, এই ঋণগুলো অনেক পুরোনো। তার পরও টাকাগুলো আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। অনেকেই পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত হচ্ছে। আবার অনেকেই রাজি হচ্ছে না। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টাকাগুলো আদায় করা যাবে বলে আশাবাদী তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের ব্যবসার বড় অংশই টেক্সটাইল খাতনির্ভর। তাই এই খাতে খেলাপির পরিমাণটাও বেশি। তবে অন্যান্য খাতেও আমরা গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি।’

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আমিন শেয়ার বিজকে বলেন, খেলাপি হওয়াটা একজন গ্রাহকের জন্য প্রথম অপরাধ। কিন্তু খেলাপি হওয়ার পরও সেই টাকা পুনঃতফসিল করার জন্য যারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন না, তারা অবশ্যই ইচ্ছাকৃত খেলাপি। এখানে ব্যাংকের দুর্বলতা পরিষ্কার। কোন শক্তিতে একজন গ্রাহক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। যদি তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তাদের দেউলিয়া ঘোষণা করা হোক। অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের টাকা ফেরত না দেওয়া এসব গ্রাহককে আইনের আওতায় আনা হোক। এখনই এসব গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এরকম অপরাধ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন এই সাবেক ব্যাংকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০