শেখ আবু তালেব: একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি, দুষ্টচক্রের রাজত্ব, বিতর্ক ও প্রশ্নবিদ্ধ নানা উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় থাকছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ব্যাংকটিতে ফের অনিয়মের আয়োজন শুরু হয়েছে। এক দিনের নোটিসের ভিত্তিতে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া অফিসারদের ফের পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্তাব জাবিনের চলতি মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১২ নভেম্বর। এর আগেই তড়িঘড়ি করে নিজের পছন্দের তালিকায় থাকা বিতর্কিতদের পদোন্নতি দিতে এই আয়োজন করছে বলে জানা গেছে। এ তালিকায় রয়েছেন ১০ জনের আলোচিত দুষ্টচক্রটি। এ চক্রের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি অনুসন্ধান করছে।
জানা গেছে, প্রিন্সিপাল এক্সিকিউটিভ ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য সাক্ষাৎকার দিতে ২৪ জনের একটি তালিকা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন ছয় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ এবং অবশিষ্ট ১৮ জন হচ্ছেন এক্সিকিউটিভ অফিসার। সাক্ষাৎকারের জন্য মনোনীত অফিসারদের মধ্যে প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের শাখায় কর্মরত অফিসাররাও রয়েছেন।
গত ২ অক্টোবর বিকালে তাদের একটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আপনাদের পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে হবে। এজন্য ৩ ও ৪ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে।
গতকাল অর্থাৎ ৩ অক্টোবর ডাকা হয় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসারদের। আজ ডাকা হচ্ছে অবশিষ্টদের। জানা গেছে, এ তালিকায় বিতর্কিত ১০ জনের নাম রয়েছে। মূলত তাদের পদোন্নতি দিতেই তড়িঘড়ি করে এ সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাদের পদোন্নতি দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় অনিয়মের মাধ্যমে। তাদের নিয়োগ দেওয়ার সময়েই সার্ভিস রুল মানা হয়নি। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের পরই তারা আরও দুঃসাহসী হয়ে ওঠেন। ব্যাংকে তাদের মতমতের বাইরে গিয়ে কেউ চাকরি করতে পারেননি। এমনকি তাদের দৌরাত্মের কারণে ব্যাংকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সহসা কেউ যেতে চান না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ফের দুষ্টচক্রের সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়ার আয়োজন চলছে। এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্তাব জাবিনকে গতকাল একাধিকবার মোবাইল ফোনে কলা দেওয়া হয়। পাঠানো হয় এসএমএস। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি।
অবশ্য সাক্ষাৎকার তথা ভাইবা নেওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বেগম শামছুন নাহার। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজনের নামে অভিযোগ রয়েছে। এটি তদন্তও করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ বিষয়টি পদোন্নতি দিতে গঠিত কমিটির সদস্যরাও জানেন। সবকিছুই দেখবেন তারা।’ এর বাইরে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
জানা গেছে, এ পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তড়িঘড়ি করে নেওয়া হয় সাক্ষাৎকারের উদ্যোগ। ঢাকায় আসতে দেওয়া হয় কয়েক ঘণ্টা সময়।
প্রসঙ্গত, ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন, ২০১০’-এর মাধ্যমে গঠন করা হয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করার সময়েই যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ না করেও ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ স্থায়ী হওয়ার সময়েই তারা দুই দফায় পদোন্নতি নেন। পরবর্তীকালে তারাই ব্যাংকে রাজত্ব শুরু করেন। ব্যাংকের অনিয়মের সব কাণ্ড এ চক্রের নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়। তাদের কথার বাইরে গিয়ে কোনো কর্মকর্তাই ব্যাংকে টিকতে পারেন না।
এ চক্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছেÑপ্রবাস গমনেচ্ছুদের নামে ঋণ ইস্যু করে নিজেই সেই ঋণের অর্থ তুলে নেওয়া হয় এবং ব্যাংকের পিয়নের নামেও ইস্যু করা হয় বিদেশগামীদের ঋণ; অর্থ খরচ করা হলেও ভাউচার থাকে না, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই গাড়ি ক্রয় করা হয়; শাখা অফিসের ভাড়া পরিশোধ করা হয় চুক্তিতে থাকা অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত প্রদানের মাধ্যমে প্রভৃতি। এসব অভিযোগের বিষয়টি এখন তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কাছে চাওয়া হচ্ছে তথ্য।