জিম অ্যান্ড জেসি কম্পোজিট

আমদানির কথা ছিল কাপড় এসেছে খালি কন্টেইনার

রহমত রহমান: আমদানি হওয়ার কথা কাপড় (ফেব্রিক্স), এসেছে খালি কন্টেইনার। আমদানির আড়ালে মুদ্রা পাচারের অভিযোগ উঠেছে জিম অ্যান্ড জেসি কম্পোজিট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। গাজীপুরের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে মোংলা কাস্টম হাউস। সম্প্রতি হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জাবেদ হোসেন সরদার বাদী হয়ে মোংলা থানা, বাগেরহাটে মামলা করেন। মোংলা কাস্টম হাউস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কাপড় আমদানি হয়েছে। তবে মোংলা বন্দর থেকে কন্টেইনার খুলে কাপড় চুরি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার ও মোংলা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, গাজীপুর দরগা বাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বগরা এলাকার শতভাগ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জিম অ্যান্ড জেসি কম্পোজিট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান। প্রতিষ্ঠানটি এমবি ম্যাক কয়েটো মেসার্স ওশান ট্রেড লিমিটেড নামে শিপিং এজেন্টের মাধ্যমে দুই কন্টেইনার কাপড় (ফেব্রিক্স) আমদানি করে। কাপড় খালাসে প্রতিষ্ঠানটি খুলনার দি মেরিনার্স ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেড নামে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মোংলা কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। চালানের ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট ও বিল অব এন্ট্রি অনুযায়ী কন্টেইনারে ২৬ হাজার ৫৬০ কেজি কাপড় থাকার কথা।

সূত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা অনুযায়ী কন্টেইনার কায়িক পরীক্ষার মাধ্যমে শুল্কায়নের সিদ্ধান্ত নেয় মোংলা কাস্টম হাউস। সে অনুযায়ী কন্টেইনারে সিল থাকা অবস্থায় কায়িক পরীক্ষার আগে বন্দরের ওজন স্কেলে তোলা হয়। এতে দেখা যায়, কন্টেইনারের ওজন শূন্য। অর্থাৎ কন্টেইনারে কোনো পণ্য নেই বলে প্রতীয়মান হয়। কর্মকর্তারা দেখতে পান, কন্টেইনারে সিলের মার্কস নেই। নকল সিল মনে হওয়ায় কন্টেইনারটি না খুলে কায়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয় এবং কন্টেইনার বন্দরের হেফাজতে রাখা হয়। পরে তা কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। কাপড়  আমদানির আড়ালে অর্থপাচার করা হয়েছে বলে ধারণা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, যৌথ তদন্ত করতে ১৭ সেপ্টেম্বর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় মোংলা কাস্টম হাউস। সে অনুযায়ী সাত সদস্যের যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে কাস্টমস, বন্দর, কাস্টমস গোয়েন্দা, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর কমিটির প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে বন্দরের ২ নম্বর ইয়ার্ডে কন্টেইনারের কায়িক পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, কন্টেইনারের সিল মার্কস বারকোডবিহীন। সিলটি নকল বলে ধারণা করেন কমিটির সদস্যরা। সিল কেটে দেখা যায়, কন্টেইনারটি সম্পূর্ণ খালি। পরে কন্টেইনার বন্দরের হেফাজতে রাখা হয়।

মোংলা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির কাগজপত্র যাচাই করে কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন, পণ্য আমদানির আড়ালে অর্থপাচার হয়েছে। তবে বিষয়টি আরও তদন্ত হওয়া দরকার। সেজন্য তদন্ত করতে ২০ অক্টোবর মোংলা কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জাবেদ হোসেন সরদার মোংলা থানা, বাগেরহাটে মানি লন্ডারিং আইনে এজাহার দায়ের করেন এবং এরই মধ্যে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

পণ্য আমদানি হয়েছে এবং বন্দর থেকে চুরি হয়ে গেছে বলে দাবি করেন জিম অ্যান্ড জেসি কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান। শুক্রবার তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মাল বন্দর থেকে চুরি হয়ে গেছে। মোংলা বন্দর থেকে পণ্য চুরি হয়ে যায়। সেজন্য এ বন্দর দিয়ে কেউ আমদানি করে না।’ তবে বিষয়টি কাস্টমস তদন্ত করেছে, যাতে পণ্য চুরি হয়েছে, কাস্টমস রিপোর্ট দিয়েছে, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন মো. আনিসুজ্জামান। তবে কাস্টমস থেকে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার বিষয়ে তিনি জানেন না বলে জানান। পণ্য আমদানির আড়ালে অর্থপাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুটি কন্টেইনারে পণ্য আমদানি করেছি। অর্থপাচার করব কেন? পণ্য যে আমদানি হয়েছে, তার সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০