নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসা ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দখলে থাকা সোনারগাঁওয়ের টাইগার সিমেন্ট কারখানায় আবারও অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ অভিযানে ১৪ বিঘা খাসজমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। কারখানাটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা শিল্পনগরীর ইসলামপুর এলাকায়।
বৃহস্পতিবার বিকালে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতিকুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধভাবে দখলে রাখা প্রায় ১৪ বিঘা খাসজমি উদ্ধার করেন। পরে প্রশাসন জমি দখলমুক্ত করে সরকারি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়।
এর আগে গত রোববার (১ নভেম্বর) বিকালে টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির দখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসি (ল্যান্ড) আল মামুন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন সময়স্বল্পতার কারণে ও বুলডোজার বিকল হয়ে পড়ায় অভিযান স্থগিত করা হয়। এরপর খাস জায়গা ছেড়ে দিতে তিন দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ে দখল ছেড়ে না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার আবারও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এদিকে সরকারি সম্পত্তি দখলের পাশাপাশি হাজি সেলিম ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০ জনের প্রায় পাঁচ বিঘা জমি প্রভাব খাটিয়ে দখলে নেন। এ সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য গত বুধবার (৪ নভেম্বর) বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ১০ ব্যক্তি। এছাড়া দেশের প্রভাবশালী শিপইয়ার্ড কোম্পানি আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড সিøপওয়েজ কোম্পানিরও ১৪ শতাংশ জমি দখল করে নেন এমপি হাজী সেলিম।
ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আলী ইসলাম জানান, ‘এমপি হাজী সেলিম প্রভাব খাটিয়ে তার দুই বিঘা সম্পত্তি দখলে নিয়ে নেন। এ বিষয়ে একাধিকবার তার মালিকানাধীন টাইগার সিমেন্ট কারখানায় গেলেও আমার জমি ক্রয় করে নেননি হাজী সেলিম। আমি তার বিরুদ্ধে দুটি মামলাও দায়ের করেছি। এছাড়া আরও ৯ জনের জমি দখল করেন হাজী সেলিম।’
এদিকে ইসলামপুর এলাকায় প্রভাবশালী কামাল হোসেন ওরফে নেতা কামালের দখলে থাকা প্রায় তিন বিঘা খাসজমি উদ্ধারে তৎপরতা চালায় প্রশাসন। ইসলামপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় কামাল হোসেনের অবৈধভাবে গড়ে তোলা মার্কেট আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই জমিতেও জেলা প্রশাসকের পক্ষে সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় অস্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয় লেখা-সংবলিত একটি সাইনবোর্ড অপসারণ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযান পরিচালনার সময় উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আতাউর রহমান, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন ও ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্য।
ইউএনও আতিকুল ইসলাম জানান, সরকারি ১৪ বিঘা খাসজমি দখলমুক্ত করতে বেঁধে দেওয়া তিন দিন সময় শেষ হওয়ার পর আবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। হাজী সেলিমের দখলে থাকা প্রায় ১৪ বিঘা জমি থেকে একটি টিনশেড গোডাউন ও পাথরের স্তূপ অপসারণ করে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত করা ওই সরকারি সম্পত্তিতে টিনের দেয়াল স্থাপন করা হবে। এছাড়া ওই সম্পত্তি সব সময় দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় পিরোজপুর ভূমি কার্যালয়ের মাধ্যমে তদারকি করা হবে।
সম্প্রতি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম নৌ-বাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে একে একে জমি দখলের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এর পর থেকেই হাজী সেলিমের দখলে থাকা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি উদ্ধার তৎপরতা চালায় প্রশাসন।