আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: লাগামহীন, মনগড়া ও ভৌতিক বিল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের সোনাপুর আঞ্চলিক শাখার বিরুদ্ধে। এমনকি এ দপ্তরের পথচলা শুরু থেকে এ পর্যন্ত হয়রানির কবল থেকে মুক্তি মেলেনি বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা। তারা বলছেন, একেকবার একেক অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে বিল। বিশেষ করে করোনাকালে প্রায়ই মনগড়া, ভৌতিক ও পকেট কাটা বিলের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা।
জেলা সদরের ধর্মপুরের হাফেজিয়া নগরের গ্রাহক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমার প্রতি মাসে সর্বোচ্চ বিল ১৭০ থেকে ২২৫ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এবার করোনার সময়ে কখনও কখনও ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিল আদায় করা হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, আগে ফ্যান আর বাতি যা জ্বলত, এখনও তা-ই। কী কারণে বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে, তাও জানা নেই তার।’
আরেক গ্রাহক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘একসময় বিল হতো ৫৭ থেকে সর্বোচ্চ ১৫১ টাকার মধ্যে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে সোনাপুর এলাকায় বসবাস করছি। আমার বাড়ি থাকে সার্বক্ষণিকভাবে তালাবদ্ধ। এর পরও সেপ্টেম্বরে ৪৬২ আর অক্টোবরে বিল পাঠনো হয়েছে ৪৮৮ টাকার।’
গ্রাহকদের অভিযোগ, মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে মিল না রেখে সোনাপুরে বসেই মনগড়া আর ইচ্ছোমতো বিল করার ফলে তারা আর্থিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফলে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার গ্যাঁড়াকলে গ্রাহক ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে নোয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের।
তাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের তুলনায় ভালো হলেও মনগড়া ভৌতিক বিলের খড়গ চাপিয়ে নানামুখী ভোগান্তিসহ গ্রাহকের পকেট কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সমিতি। এমনকি করোনাকালে গ্রাহক স্বার্থে সরকারি নির্দেশও মানা হয়নি। মে মাসে বিতরণ করা বিল মার্চ মাস থেকে ঠিক করে দেওয়ার কথা জানালেও জুনে বিলের অঙ্ক রহস্যজনক কারণে আরও বেড়ে যায়।
জানা গেছে, বাড়তি বিল সময়মতো পরিশোধে ব্যর্থ হলেই লাইন বিচ্ছিন্ন করা এবং পুনঃসংযোগ নেওয়ার সময় গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে ভোগান্তিরও শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া ভুতুড়ে বিল সংশোধন করতে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সোনাপুর কার্যালয়ে গিয়েও হয়রানির শিকার হন গ্রাহকরা। এমনকি সমিতির ভুল হওয়া সত্ত্বেও ডুপ্লিকেট ফি বাবদ কেটে নেওয়া হয় বাড়তি টাকা। অদৃশ্য কারণে ডিমান্ড চার্জের নামেও নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা।
এদিকে গড় বিলের কথা বলে প্রস্তুতকৃত বিল শুধু বেশি হয়েছে, কম হয়নি কেনÑএমন প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি নোয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সোনাপুর শাখার ডিজিএম বলাই মিত্র। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত বিলের সমস্যা যাদের হয়েছে তাদের বলেছি, পরর্বতী মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হবে।’
অপরদিকে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক এক সভাপতি বলেন, ‘জেনারেল ম্যানেজাররা অনেক সময় পবিস সদর দপ্তরের কথা বলে একক সিদ্ধান্তে এমন গড়মিল বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করেন। গ্রাহক ভোগান্তির প্রতিকার দাবি করলে তিনি পরবর্তী মাসে ঠিক করে দেবেন বলে জানান। আসলে তা আর ঠিক হয় না।’
এ বিষয়ে নোয়াখালীর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বিলিং সেকশন বা ফাইন্যান্স বিভাগের কর্মীদের অতিরিক্ত কাজের চাপ সামাল দিতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়।’ হাজার হাজার গ্রাহকের বিলিং সেবা দিতে গিয়ে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।