নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে গত বৃহস্পতিবার ১০টি বাসে আগুন লাগার ঘটনায় শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, বংশাল, কলাবাগান, সূত্রাপুর, খিলক্ষেত ও তুরাগ থানায় দায়ের করা পৃথক মামলায় ২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জিআর শাখার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এদিন মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তারা আসামিদের আদালতে হাজির করে তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ডের প্রার্থনা করেন।
শাহবাগ থানায় দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় ছয় আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেনÑহযরত আলী, মঈনউদ্দিন, আবু সাঈদ শান্ত, আবুল কালাম আজাদ, আবু সুফিয়ান ও সোহেল।
পল্টন থানার এক মামলায় আলিজা আল আহমেদ মিটু ও মেহেদী হাসান ইয়াছিনের তিন দিন করে এবং এ কে ফজলুর বারী, আলতাফ হোসেন, নাঈম প্রধান, আলিফ মাহমুদ, হুমায়ুন রশীদ টুটুল, খন্দকার মাশুকুর রহমান এবং রাশেদুজ্জামানের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পল্টন থানা পুলিশ আসামিদের সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন।
মতিঝিল থানার এক মামলায় আবদুর রহমান তাহেরের দুই দিন এবং আরেক মামলায় জাকির হোসেনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ দুই মামলায় তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। বংশাল থানায় দায়ের করা একটি মামলায় দুই আসামি সফিউদ্দিন আহমেদ সেন্টু ও মৃদুল রহমান জনি ওরফে মোরশেদুর রহমান জনির দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
এদিকে কলাবাগান থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি মাহিফুর রহমান টিপু ও মাঈনউদ্দিন চৌধুরীর দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সূত্রাপুর থানায় দায়ের করা মামলায় চার আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।
খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা মামলায় দুই আসামি মশিউর রহমান মসি ও ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলামের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তুরাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সোহেল মিয়া নামে এক আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাজধানীর অন্তত ১০টি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিন বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাসে আগুন দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, তারা বেলা সাড়ে ১২টা থেকে একে একে কাঁটাবন, বংশাল, মতিঝিল, শাজাহানপুর, গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার ও প্রেস ক্লাব এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার খবর জানতে পারেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাস পোড়ানো এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে ৯টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে মতিঝিল থানায় দুটি, শাহবাগ থানায় দুটি, পল্টন থানায় দুটি এবং কলাবাগান, ভাটারা ও বংশাল থানায় একটি করে মামলা করার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৪৬ জনকে।
অন্য যেসব এলাকায় বাস পোড়ানো হয়েছে, সেসব থানাতেও মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ইফতেখায়রুল ইসলাম জানিয়েছেন।
মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার আসামির তালিকায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের নাম রয়েছে। এছাড়া মতিঝিল থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক ফজলু, থানা যুবদলের সভাপতি ইকবাল হোসেন বাবু এবং যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শ’খানেক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে মতিঝিলের দুই মামলায়।
শাহবাগ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলাগুলোয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এসএম জিলানীসহ প্রায় ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভাটারা থানার মামলায় বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি শাহনুর আলম ও নজরুল ইসলাম, ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বাবু, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর ইসলাম মিল্টন, রূপনগর থানা যুবদলের সভাপতি জনসহ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের ৯৫ জনের নাম রয়েছে।
অন্য থানায় দায়ের করা মামলাগুলোতেও বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।