নিজস্ব প্রতিবেদক: শীতের সবজির সরবরাহ বাড়তে শুরু করায় দীর্ঘ চার মাস ধরে লাগামহীন কাঁচাবাজারে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। গত এক সপ্তাহে সবধরনের শাকসবজির সরবরাহ বাড়ায় পাইকারিতে গড়ে ১০ শতাংশ করে দাম কমেছে। তবে সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনও চড়া বলে মনে করেন ক্রেতারা। সবজির সঙ্গে পেঁয়াজ ও আলুর জন্যও দিতে হচ্ছে চড়া দাম। ফলে বাজারে গিয়ে পণ্যের দামে এক ধরনের নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে এদিন শিম বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা এবং তার আগের সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা। এছাড়া দেশি টমেটোর দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৮০ টাকায়, মুলা ৩০ টাকায়, ঝিঙা, ধুন্দুল ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এসব পণ্যে কেজিতে কমেছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে। তবে এখনও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুখিকচু, শসা ও গাজর। পেঁপে ৪০, ঢেঁড়শ ৫০, গাজর ৮০-৯০ টাকা কেজি, ছোট আকারের কপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে দাম কমার এই চিত্রে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা শফিকুল ইসলাম মনে করেন, দুয়েকটি সবজির দাম কমলেও অধিকাংশ সবজির দাম এখনও অনেক বেশি। জিনিসপত্রের দাম বেশি হলে মাসের খরচ পোষাতে হিমশিম খেতে হয়ে। অনেক কাটছাঁট করে চলতে হয়। শাকসবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। এদিন হাতিরপুল কাঁচাবাজারে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে শিম, করলা। মুলার দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকা। অন্যান্য সবজির দামও ছিল অপরিবর্তিত। তবে বিভিন্ন স্থানে এদিন ভ্যানে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে শিম।
গত জুলাইয়ের শুরুতে বন্যায় নষ্ট হয়ে যায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জসহ অধিকাংশ জেলার সবজির বীজতলা। এরপর থেকেই সব ধরনের সবজির দাম বাড়তে শুরু করে। বিক্রেতারা বলছেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন স্থানে অতিবৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে আরও এক দফায় সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এসব কারণে এ বছর দীর্ঘ সময় ধরে সবজির দাম বাড়তি ছিল।
কারওয়ান বাজারে সবজির আড়ৎ হাওলাদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক নাহিদ পারভেজ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় এবার কয়েক ধাপে সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। সে কারণে সরবরাহ ছিল কম, দাম ছিল বেশি। যেসব চাষি সবজি ধরে রাখতে পেরেছিল তারা এবার প্রচুর মুনাফা করেছেন। তবে ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষকের লোকসানও হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে ‘আমদানি’ (জেলা শহর থেকে ঢাকায় সবজি আসা) বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। ফলে দামও ধীরে ধীরে কমছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সবজির দাম আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে হয়।
বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর দাম অপরিবর্তিত থাকলেও রসুন ও আদার দাম খানিকটা কমে এসেছে। চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকায়, আদা ৯০-১১০ টাকায়। তবে আগের মতোই প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আলু। চীন, তুরস্ক ও মিশর থেকে আসা পেঁয়াজ ৫০ আর দেশি পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একজন ব্যবসায়ী জানান, বাজারে এখন খোলা সয়াবিন তেল ৯৫ টাকা আর পাম তেল ৯০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। আপাতত দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। চলতি সপ্তাহে প্রতি ড্রাম সয়াবিন তেলের দাম ১৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে আর পাম তেল আগের মতোই প্রতি ড্রাম ১৭ হাজার ৬০০ টাকায় কেনা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।