২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট ও এক্সিট সুবিধা গ্রহণ

২০ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: খেলাপি ব্যবসায়ীদের আবারও ব্যবসায় ফিরে আসার জন্য গত বছর ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহকরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ২০ হাজার ৭০৩টি আবেদন করেন। এসব আবেদনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৩০৭টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়। এতে ২০ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত হয়। এতে প্রায় ৫৪৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ডাউন পেমেন্ট আদায় করেছে ব্যাংকগুলো। যদিও করোনার প্রভাব, নতুন করে অর্থায়ন ও নীতিগত সহযোগিতা না পাওয়ায় শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জন্য।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারের দরপতন, স্থানীয় বাজারের অসম প্রতিযোগিতা, উদ্যোক্তাদের দূরদর্শিতার অভাবে লোকসানে পড়েন বিভিন্ন খাতের

ব্যবসায়ীরা। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেডিং খাত অর্থাৎ ভোগ্যপণ্য (গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি) আমদানিকারক, জাহাজ ভাঙা, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ইত্যাদি। ফলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি হয়ে পড়েন এসব ব্যবসায়ীরা।

গত বছরের ১৬ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে। এ নীতিমালায় স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানের ঋণখেলাপিরা বিশেষ এ সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ সব খেলাপির জন্যই বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। পুনঃতফসিলের পর ঋণখেলাপিরা নিতে পারবেন নতুন ঋণও। এসব সুযোগ-সুবিধা পেতে ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপিরা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল সুবিধা পাবেন। কেস টু কেস বিবেচনায় ঋণ পরিশোধে এক বছরের জন্য গ্রোস পিরিয়ডও পাওয়া যাবে।

তবে জারিকৃত নীতিমালায় বেশি সুবিধা পাবেন ট্রেডিং (গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি), জাহাজ শিল্প, লোহা ও ইস্পাত শিল্প খাতের ঋণখেলাপিরা। এসব খাতের খেলাপি গ্রাহকরা সরাসরি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন। অন্য খাতের ঋণখেলাপিদের পুনঃতফসিল সুবিধা পেতে ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এ সুবিধায় আবারও পুরোদমে ব্যবসায় ফিরে আসার আশা সঞ্চার হয়ে চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণযোগ্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে। এর মধ্যে ভোগ্যপণ্যের বড় বড় শিল্পগ্রুপ তানাকা গ্রুপ, ঢাকা ট্রেডিং, এহসান গ্রুপ, আহাদ গ্রুপ, এসএ গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপ, সিদ্দিক গ্রুপ, মাবিয়া গ্রুপ, রুবাইয়া গ্রুপ, ম্যাক করপোরেশনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ঋণ নিয়মিত করে। এছাড়া প্রক্রিয়াধীন আছে আরও শতাধিক আবেদন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট নীতিমালার আওতায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহকরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ২০ হাজার ৭০৩টি আবেদন করেন। এর মধ্যে ঋণ পুনঃতফসিল-সংক্রান্ত আবেদন পড়েছিল ১১ হাজার ২৬৪টি। এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত আবেদনের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৩৯। এসব আবেদনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৩০৭টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৯ হাজার ৬০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সাত হাজার ৩২৮ জন গ্রাহক ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধায় ১৮ হাজার ২০২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ঋণ নিয়মিত করে। পাঁচ হাজার ৯৭৯ জন খেলাপি গ্রাহক এককালীন এক্সিট সুবিধার আওতায় এক হাজার ৪০১ কোটি ৯২ লাখ টাকা নিয়মিত করে। ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোর আদায় করা ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৪৭ কোট ৭৮ লাখ টাকা।

অন্য আরেক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংকগুলো মাত্র দুই হাজার ৬৫৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে। গত বছরের একই সময়ে পুনঃতফসিলের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। মূলত করোনা ও ব্যবসা ভালো না হওয়া কমেছে পুনঃতফসিলের হার।

এ বিষয়ে মোস্তফা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান শফিক উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের ৬০ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা। কিছু কারণে গ্রুপের দু-একটি প্রতিষ্ঠানে লোকসান হয়েছে। অথচ একটা-দুইটা প্রতিষ্ঠানের লোকসানের কারণে ব্যাংকগুলো গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। আশা করছি, ব্যাংক যদি এলসিতে সহযোগিতা করে আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াব।

এ বিষয়ে এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দীন আলম শেয়ার বিজকে বলেন, এর মধ্যে আমরা ১৬টি ব্যাংকে ঋণ পুনঃতফসিল করেছি। আরও চারটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পুনঃতফসিল প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। তিনি বলেন, কারখানার কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোকে এলসি করার সুযোগসহ নীতিগত সহযোগিতা করতে হবে। এতে ব্যাংকের মন্দা ঋণ কমবে।

উল্লেখ, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ৫৯টি ব্যাংক মোট ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০