অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে কুমিল্লা কমিশনারেটের ‘হ্যাটট্রিক’

রহমত রহমান: অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ও রিটার্ন (দাখিলপত্র) জমার হার বাড়ছে। এর মাধ্যমে অটোমেশনের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। নিবন্ধন ও রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে কমিশনারেটগুলোয় প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আর এই প্রতিযোগিতায় তিন মাস ধরে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

অক্টোবরে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখিয়েছে এ কমিশনারেট। পরপর তিনবার প্রথম স্থান অর্জন করে রিটার্ন দাখিলে হ্যাটট্রিক করেছে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে অক্টোবর মাসে ৯৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করা হয়েছে। করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রম, টিমওয়ার্ক ও কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে টানা তৃতীয়বার এ সফলতা এসেছে বলে মনে করেন কমিশনারেটের কর্মকর্তারা।

## অক্টোবরে এ কমিশনারেটের রিটার্ন দাখিল হার ৯৩.৬৮%

## আগস্টে রিটার্ন দাখিল হার ৯৮.৯০% ও সেপ্টেম্বরে ৯৮.৭১%

## অক্টোবর মাসে মোট রিটার্ন দাখিল ৬৮৪১২, প্রবৃদ্ধি ৩২.১৭%

কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট সূত্র জানায়, এ কমিশনারেটে রিটার্ন দাখিলযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আট হাজার ৮৭২টি। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে আট হাজার ৩১১টি অনলাইনে ৪৯টি ম্যানুয়ালি রিটার্ন দাখিল করা হয়েছে। অক্টোবর মাসে মোট রিটার্ন দাখিল হয়েছে আট হাজার ৩৬০টি। নিবন্ধনের তুলনায় রিটার্ন দাখিলের হার ৯৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। মোট দাখিলপত্রের তুলনায় অনলাইনে দাখিলের হার ৯৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল আট হাজার ৩৩০টি। এর মধ্যে অনলাইনে সাত হাজার ৮০৭টি ও ম্যানুয়ালি ১০২টি প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দাখিল করেছে। নিবন্ধনের তুলনায় দাখিলপত্র দাখিলের হার ৯৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোট দাখিলপত্রের তুলনায় অনলাইনে দাখিলের হার ৯৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। আগস্ট মাস পর্যন্ত এ কমিশনারেটের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল সাত হাজার ৬৮৯টি। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে সাত হাজার ৮৯টি, যার মধ্যে অনলাইনে সাত হাজার ১১টি ও ম্যানুয়ালি ৭৮টি। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের তুলনায় দাখিলপত্র দাখিলের হার ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ। আর মোট দাখিলপত্রের তুলনায় অনলাইনে দাখিলপত্র দাখিলের হার ৯৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

এনবিআর সূত্র জানায়, অক্টোবরে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটের নিবন্ধিত ১৩ হাজার ২৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১ হাজার ৮৭২টি প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দাখিল করেছে। রিটার্ন দাখিলের হার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটের নিবন্ধিত আট হাজার ৭৪৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাত হাজার ৮৪টি রিটার্ন দাখিল করেছে। রিটার্ন দাখিল হার ৮০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এছাড়া রংপুর কমিশনারেটের ৯ হাজার ৫৪১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয় হাজার ৮৮টি রিটার্ন দাখিল করেছে, প্রবৃদ্ধি ৬৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। রাজশাহী কমিশনারেটের ১৩ হাজার ৪৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চার হাজার ৯৪৮টি রিটার্ন দাখিল করেছে, প্রবৃদ্ধি ৩৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।

চট্টগ্রাম কমিশনারেটের ২৪ হাজার ৩৮৬টির মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ১০ হাজার ৪৮৮টি, প্রবৃদ্ধি ৪৩ দশমিক ০১ শতাংশ। এলটিইউর ১৪২টির মধ্যে ৯৪টি, প্রবৃদ্ধি ৬৬ দশমিক ২০ শতাংশ। খুলনার ১৪ হাজার ২৯৬টির মধ্যে চার হাজার, প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ঢাকা পশ্চিমে ২৫ হাজার চারটির মধ্যে পাঁচ হাজার ৮২টি, প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ। ঢাকা পূর্বে ১৪ হাজার ৩২২টির মধ্যে দুই হাজার ৪৮২টি, প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ঢাকা উত্তরে ৩০ হাজার ৩৮৭টির মধ্যে তিন হাজার ৮৪টি, প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। ঢাকা দক্ষিণে ৫০ হাজার ২০৬টির মধ্যে চার হাজার ৮৫২টি, প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান দুই লাখ ১২ হাজার ৬৩৪টি। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৬৮ হাজার ৪১২টি, প্রবৃদ্ধি ৩২ দশমিক ১৭ শতাংশ।

অপরদিকে, কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে রিটার্ন দাখিলের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন কুমিল্লা কমিশনারেটের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে অন্যতম হলো করদাতা সচেতনতা বৃদ্ধি। ছয় জেলায় করদাতাদের সচেতন করার লক্ষ্যে টেলিফোনে যোগাযোগের পাশাপাশি মোবাইলে বাল্ক এসএমএস, গণমাধ্যম ও স্থানীয় কেব্ল অপারেটরে বিজ্ঞপ্তি, মাইকিং এবং বাসায় সশরীরে গিয়ে করদাতাদের বুঝিয়ে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া শীর্ষ করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সৌজন্য উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।

অপরদিকে, কর্মকর্তাদের রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধকরণ কৌশলসহ আইন ও বিধি সম্পর্কে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। কর্মকর্তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্দিষ্ট সময় অন্তে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে স্পন্দন, কর্মস্পৃহা ও সুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  প্রতিটি বিভাগ ও সার্কেলে প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সম্পন্ন করার বিষয়ে সদর দপ্তর, কুমিল্লা থেকে সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করা হয়। নিবারণ কার্যক্রম জোরদারভাবে পরিচালনা করা, নিয়মিত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, উৎপাদন ও সেবা খাতের তদারকি বৃদ্ধি করায় আগের মাসগুলোর তুলনায় রাজস্ব আহরণ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে নান্দনিক দৃশ্যমান প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। একটা ভালো টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এ অর্জন। স্বীকৃতি কাজের প্রণোদনা বৃদ্ধি করে। কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছেন। আমরা প্রকৃত কর্মীদের স্বীকৃতিদানের চেষ্টা করছি। মাঠপর্যায়ে যেসব পরিশ্রমী কর্মকর্তা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। মোট জমাকৃত দাখিলপত্রের তুলনায় অনলাইনে দাখিলের শতকরা হার ৯৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত তিন মাসের মতো ভবিষ্যতেও রিটার্ন দাখিলের ধারা অব্যাহত থাকবে।

যুগ্ম কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে এ কমিশনারেট টানা তৃতীয়বার প্রথম। রিটার্ন দাখিলের প্রথম স্থান অর্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। টিমওয়ার্কের ফলে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন কমিশনার যোগদানের পর অনলাইন রিটার্ন দাখিলের চিত্র পাল্টে যায়। গত জুলাইয়ে তিনি যোগদানের সময় অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে কুমিল্লার অবস্থান ছিল চারে। রিটার্ন দাখিলের হার ছিল ৫১ শতাংশ। তিনি যোগদানের পর ১৫ জুলাই কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম জুম সভা করা হয়। সভার পরপরই কমিশনার তদারকি শুরু করলেন। এ কমিশনারেটের ছয়টি জেলায় করদাতাদের ফোন, প্রতিষ্ঠানের তদারকি বাড়ানো হয়। ‘রিটার্ন ওয়ানস্টপ কাউন্টার’ গঠন করা হয়। কুমিল্লা ভ্যাট টিম নিরন্তর ও ক্লান্তিহীন কাজ শুরু করে।

অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল হাকিম বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও সাহস ও উদ্যম নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাজস্ব আদায় ও রিটার্ন অনলাইন দাখিলের কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি রিটার্ন দাখিলে অসাধারণ অবদানের জন্য রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারের ধারা অব্যাহত থাকলে সবার কাজের মান বাড়ে।

১৭ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজ

কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, অটোমেশন সরকারের অগ্রাধিকার। এনবিআর সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে বরাবরই অগ্রণী। কুমিল্লার কর্মপ্রবণ টিম প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। কুমিল্লার সঙ্গে এনবিআরের সম্মানও উচ্চকিত করেছে। করোনাকালে কুমিল্লা টিম কখনও পশ্চাদমুখী থাকেনি। দলবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা ও প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। করোনাকালে ভয়কে জয় করে কুমিল্লা টিম নিজ কাজে এগিয়ে গেছে। দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ও প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। সক্ষম ও দক্ষ কর্মকর্তাদের বাছাই করে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিলতর কাজে নিয়োগ এবং মনিটরিং উদ্বুদ্ধকরণ এক্ষেত্রে গতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। কর্মস্থলে দেশাত্মবোধ ও সেবার মনোভাব থাকা জরুরি। সারা বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের এ রকম কাজের ধারা অব্যাহত থাকা উচিত। অফিস সময় ছাড়াও বাড়তি সময় কাজ করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের মনোভাব প্রশংসনীয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০