মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধসের ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই পুরোপুরি বা আংশিক ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাজার ভালো থাকায় যাদের লোকসান ছিল তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন। তবে এর মধ্যে নেই বেশিরভাগ ব্যাংকের বিনিয়োগকারী। অপেক্ষা, লভ্যাংশ সমন্বয় কোনোটাতেই ফল হয়নি। লাভের দেখা মেলেনি এ খাতের বিনিয়োগকারীদের। তবে ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে, এখনও সে প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে এমন পোর্টফোলিওতে এখনও লোকসান রয়ে গেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণ করার পর অন্য সব খাত ঘুরে দাঁড়ালেও বিনিয়োগকারী টানতে পারেনি এ খাতের কোম্পানি। তবে সম্প্রতি ধীরে ধীরে এ খাতের শেয়ারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি ব্যাংক শেয়ারে এখন যে চাহিদা রয়েছে, এমন থাকলে তারা লোকসান কাটিয়ে উঠবেন বলে আশাবাদী।
তারা জানান, দর কম থাকলে শেয়ার কিনে সমন্বয় তথা লোকসান পোষানো ব্যাকরণসম্মত উপায় বলে বাজার বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও কার্যক্ষেত্রে এর উল্টোটা ঘটছে। সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে আবারও বিনিয়োগ করেছেন তারা। কিন্তু এখন তাদের লোকসানের অঙ্ক আরও বেড়েছে। কারণ ব্যাংক খাত কখনও দীর্ঘদিন ভালো থাকেনি। সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিন এ খাতটির মোট লেনদেনে ১০ শতাংশের বেশি অবদান দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহের শেষ দিনে যা ২০ শতাংশ ছড়িয়ে যায়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক বিনিয়োগকারীরা লোকসান কাটানোর সুযোগ পাবে।
শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, তিনি ধসের আগে (২০১০ সালে) একটি ব্যাংকের শেয়ারে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এরপর সমন্বয় করার জন্য বিনিয়োগ করেছিলেন আরও দুই লাখ টাকা। কিন্তু এর পরও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখন তিনি লোকসান বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, লোকসান আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। এই খাতটি স্থিতিশীল থাকলে হয়তো শিগগির এখান থেকে বের হতে পারব।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ২০১০ সালের ধস থেকে বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। তারা যদি সে সময় অতিমূল্যায়িত শেয়ার না কিনতেন, তবে আজ এমন দশা হতো না। বিনিয়োগকারীদের সব সময় একটি কথা স্মরণ রাখা উচিত যে, বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে নতুন-পুরোনো এমন অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যারা না বুঝে অন্যের পরামর্শে বিনিয়োগ করেন। তাদের এমন প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন বাজারের যে পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে সব ধরনের শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১০-১১ সালে অল্প দিনের ব্যবধানে বাজারে অধিকাংশ শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। হুজুগে মেতে মৌলভিত্তি যাচাই না করেই বিনিয়োগকারীরা এসব অতিমূল্যায়িত শেয়ার কেনেন। পরবর্তী সময়ে বাজারে পতন হলে তাদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হয়, যার মাশুল তারা আজও দিয়ে যাচ্ছেন। যারা ২০১০ সালের শেষদিকে বিনিয়োগ করেছিলেন, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সে সময় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সূচক প্রায় এক হাজার ২০০ পয়েন্ট বেড়ে আট হাজার ৯১৮-এ অবস্থান করে। আর ডিএসইর লেনদেন গিয়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ২৪৯ কোটি টাকায়। কোনো কোনো শেয়ার ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। এর পরপরই বাজারে ধস নেমে আসে। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এক দিনের ব্যবধানে সূচকের পতন হয় ৬০০ পয়েন্ট। পরবর্তী সময়ে সূচক সাড়ে তিন হাজারের ঘরে নেমে যায়। লেনদেন চলে যায় ২০০ কোটি টাকার নিচে। সে সময় যারা অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনেছিলেন, তারা আজও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যাংক শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা। কারণ ওই সময়ে ব্যাংক শেয়ার ছিল সবার আগ্রহের শীর্ষে। পরবর্তীকালে ব্যাংক শেয়ারের চাহিদা তলানিতে চলে যায়।