মুনাফা বৃদ্ধিতে চুয়াডাঙ্গায় বেড়েছে সবজি আবাদ

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা একটি কৃষি নিভর্রশীল জেলা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে শাকসবজি বিক্রি করে কৃষকরা জেলার অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বছরই শাকসবজি চাষ হচ্ছে। জেলায় শুধু শীতকালেই নয় গ্রীষ্মকালেও প্রচুর সবজির আবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে চুয়াডাঙ্গায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা জানা যায়, পাঁচ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার দুই হাজার ২০০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় এক হাজার হেক্টর, দামুড়হুদায় এক হাজার ৫২০ হেক্টর ও জীবননগরে এক হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এছাড়া আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৩৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর এক হাজার ৭৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ৮২০ হেক্টর, দামুড়হুদায় এক হাজার ৩১৪ হেক্টর ও জীবননগর এক হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে এ আবাদ হয়।

কষেকরা জানান, ধান চাষের তুলনায় সবজি চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। অল্প সময়ের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। তাছাড়া ধান চাষে নিয়মিত সেচ দেওয়াসহ নানা ঝামেলা রয়েছে। যে কারণে কৃষকরা এখন সবজি চাষে ঝুঁকছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা গ্রামের কিষাণি ডলি খাতুন বলেন, তার দুই বিঘা আবাদি জমি আছে। ৯ কাঠা জমিতে বেগুন ও বাকি জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। ১০ হাজার টাকা খরচের বিনিময়ে ইতোমধ্যে ৪০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। আগামী ফাল্গুন মাস পর্যন্ত গাছে বেগুন ধরবে বলে জানান। বর্তমান বাজারদর অব্যাহত থাকলে প্রায় এক লাখ টাকার বেগুন বিক্রি হবে বলে তিনি জানান। শুধু ডলি নন, অধিকাংশই চাষি এখন সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। জেলার সবখানে সবজি চাষ হলেও সদর ও দামুড়হুদা উপজেলায় সবজির ব্যাপক চাষ হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধানের পাশাপাশি বিস্তীর্ণ জমিতে ব্যাপক হারে সবজির আবাদ হয়েছে। সবজির মধ্যে ফুলকপি আবাদ হয়েছে এক হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে, বাঁধাকপির ১ হাজার ৪৪৫ হেক্টরে, মুলা ৫৬৫ হেক্টরে, বেগুন এক হাজার ৪০৮ হেক্টরে, টমেটো ৭৪৫ হেক্টরে, সীম দুই হাজার ৪৫ হেক্টরে, বরবটি ৬৫ হেক্টরে, ওলকপি ৩৫ হেক্টরে, লাউ ৪৭৫ হেক্টরে, পালংশাক ৩৫০ হেক্টরে, লালশাক ৩৪৫ হেক্টরে, শশা ২৭৫ হেক্টরে, মিষ্টি কুমড়া ৪৫ হেক্টরে, করলা ৪০ হেক্টরে, উছতে ৮০ হেক্টরে, গাজর ৩৫ হেক্টরে এবং ধনে পাতা আবাদ হয়েছে ২৫০ হেক্টর জমিতে।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালের পর থেকে ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। ধানের আবাদে লোকসানের কারণে অনেক কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। লোকসান থেকে বাঁচতে অনেক কৃষক সবজি চাষে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষক, যারা নিজেরা শ্রম দিতে পারেন; এমন কৃষকরা ধান চাষ ছেড়ে দিয়ে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

দামুড়হুদা উপজেলার কেশবপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক ও দামুড়হুদা উপজেলা আদর্শ কৃষক সংগঠনের সভাপতি সামসুল ইসলাম বলেন, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ফুলকপির আবাদ করেছিলেন। আড়াই লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ১০ লাখ টাকা কপি বিক্রি করেছেন। এছাড়া ২৭ থেকে ৪০ দিনের ব্যবধানে ১০ কাঠা জমিতে কপির চারা তৈরি করে খরচ বাদে প্রায় দুই লাখ মুনাফা করেছেন।

আলমডাঙ্গা উপজেলার বুড়োপাড়া গ্রামের চাষি সবুজ রেজা জানান, ধান চাষের চেয়ে সবজি আবাদে খরচ কম, লাভ বেশি। ধানের দাম না পাওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক ধান আবাদ ছেড়ে দিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। তিনি জানান, তার প্রায় ৩০ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। ওই জমির মধ্যে তিনি শুধু চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন। বাকি জমিতে তিনি মিশ্র ফল ও সবজির চাষ করেন।

চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি গ্রামের কৃষক আশাদুল হক শান্তি জানান, ৩৮ বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপির চাষ করেছিলেন। বিঘাপ্রতি ১৮ থেকে ২০ হাজার খরচ হয়। তিনি বিঘাপ্রতি ৬০-৬৫ হাজার টাকা দরে ক্ষেত ধরে ফুলকপি ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে তার ১৫ লাখ ২০ লাক টাকার মতো লাভ হয়েছে।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, সবজি অঞ্চল নামে ক্ষত এ উপজেলা থেকে  প্রতিদিন আটটি স্পট থেকে গড়ে তিন ট্রাক করে সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। বেসরকারি হিসেবে এটি আরও অনেক বেশি।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ খামারবাড়ী প্রশিক্ষণ সম্পাদক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, চুয়াডাঙ্গা একটি কৃষিপ্রধান জেলা। চুয়াডাঙ্গা সদর ও দামুড়হুদায় ব্যাপক সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষ বাড়ার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। গত কয়েক বছর ধানের মূল্যকম ছিল। এ জন্য কৃষকরা সবজির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের কম খরচে অধিক লাভ হয় এমন ফসল আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০