মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর সম্প্রতি এর ছন্দপতন দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করেই ধারাবাহিকতা হারিয়েছে বাজার, যে কারণে কয়েক দিন ধরে উত্থানের চেয়ে বেশি পতন দেখা যাচ্ছে। আর পতনের বাজারে বাড়ছে দুর্বল কোম্পানির দৌরাত্ম্য। বাছ-বিচার ছাড়া এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন একশ্রেণির বিনিয়োগকারী। লাভের প্রত্যাশা নিয়ে তারা এমনটি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি যেসব দুর্বল প্রতিষ্ঠান শেয়ারদর বৃদ্ধির দৌরাত্ম্য দেখাচ্ছে, তার কোনোটারই নেই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। অর্থাৎ কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে এসব শেয়ারের দর। এর মধ্যে দীর্ঘদিন লেনদেন স্থগিত ছিল এমন কোম্পানিও রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, পুঁজিবাজারের নি¤œমুখী প্রবণতা থাকলে কারসাজিকারীরা দুর্বল ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির দিকে ঝুঁকে পড়েন। তারা এখান থেকে ফায়দা হাসিল করতে চান। তাই এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
বাজারচিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সম্প্রতি ছয় কার্যদিবস বড় বড় পতন হয়। গতকালসহ ১০, ১১, ১৫, ১৮, ২২ নভেম্বর উল্লেখযোগ্যহারে কমতে দেখা যায় ডিএসইর সূচক। এর মধ্যে গতকাল বাদে প্রতিটি দিনই এগিয়ে ছিল দুর্বল এবং ছোট মূলধনি কোম্পানি। গতকাল বিমা খাতের আধিপত্যের কারণে দুর্বল কোম্পানিগুলো তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এর মধ্যে শ্যামপুর সুগার, মেঘনা পিইটিসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা যায়। তবে এর আগের কার্যদিবসে দুর্বল কোম্পানির দাপটে পিছিয়ে যায় মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি।
এদিন দর বৃদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে ছিল বিতর্কিত কোম্পানি শ্যামপুর সুগার। অকারণে দর বৃদ্ধির জের ধরে উধাও হয়ে যায় এ কোম্পানির শেয়ারের বিক্রেতা। প্রতিটি শেয়ারদর বাড়তে দেখা যায় ১০ শতাংশ করে। দিন শেষে এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার কেনা-বেচা হয় ৬৪ টাকায়।
পরের অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাতের দুলামিয়া কটন। শ্যামপুর সুগারের মতো এই কোম্পানিতেও ছিল বিক্রেতার আকাল, যার জের ধরে দিন শেষে এই কোম্পানির শেয়ারদরও ১০ শতাংশ বাড়ে। একইভাবে শেয়ারদর বাড়তে দেখা যায় দীর্ঘদিন থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানি সাভার রিফ্র্যাক্টরিজের। দিন শেষে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়তে দেখা যায় প্রায় আট শতাংশ। এই তালিকায় ছিল জুটস স্পিনার্স। কোনো কারণ ছাড়া এ কোম্পানির শেয়ারদরও প্রায় সাত শতাংশ বাড়ে। এছাড়া অলটেক্স, আরএন স্পিনিং, তাল্লু স্পিনিংসহ আরও কিছু কোম্পানি দর বৃদ্ধির দৌড়ে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিকে টেক্কা দিয়েছে।
এদিকে গতকাল দর বৃদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে ছিল দীর্ঘদিন লেনদেন স্থগিত থাকা জিলবাংলা সুগার। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে বিএসইসি এর শেয়ার লেনদেন স্থগিত রাখে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত রাখা হয়। সম্প্রতি আবারও এর লেনদেন চালু হয়েছে। গতকাল এ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় পাঁচ শতাংশের বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজার নিম্নমুখী হলেই এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি শুরু হয়, যার জের ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকে এসব শেয়ারের দর। আর একসময় এসব কোম্পানির কাছে প্রতারিত হন বিনিয়োগকারীরা। তাই এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, মূলধন ও শেয়ার কম থাকায় এসব কোম্পানি টার্গেট করছে তারা। এরপর নিজেরা কয়েকজন মিলে নেমে পড়ছেন জুয়া খেলায়। একটু একটু করে দর বাড়িয়ে শেয়ার সেল করে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। পরে আবার সুযোগমতো কম দরে শেয়ার কেনেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারে যারা কারসাজি করে তাদের নজর থাকে স্বল্পমূলধনি এবং কম শেয়ার রয়েছে এমন কোম্পানির দিকে। আর তাদের ফাঁদে পা দেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ব্যাপারে বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
জানা যায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম ও শেয়ারসংখ্যা ৬০ লাখের নিচে রয়েছে, এমন কোম্পানিতে কারসাজিকারীদের দৌরাত্ম্য বেশি থাকে। শেয়ার কম থাকায় তারা এসব কোম্পানি নিয়ে সহজেই গেম করতে পারে। তারা কৌশলে অল্প অল্প করে শেয়ার কিনে উল্লেখিত শেয়ার অতিমূল্যায়িত করে ফেলে। টানা দর বৃদ্ধির কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আকৃষ্ট হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।