জুন ক্লোজিং ১৫৫ কোম্পানির লভ্যাংশ

বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন পাঁচ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জুন ক্লোজিং কোম্পানির লভ্যাংশ-সংক্রান্ত সভা শেষে করেছে। তালিকাভুক্ত প্রায় দুই শতাধিক কোম্পানি এরই মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ১৫৫টি কোম্পানি। এসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীরা পাবেন প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ। পক্ষান্তরে লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি ৪০টি প্রতিষ্ঠান।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ বছর ৫৭টি প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে, যার মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ার দিয়েছে। আর ৯টি প্রতিষ্ঠান কোনো নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়মের ফাঁদে পড়ে এ বছর নগদ লভ্যাংশ দিতে বাধ্য হয়েছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

২০১৯-২০ আর্থিক বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডাররা নগদ লভ্যাংশ পাচ্ছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। একইভাবে এ বছর শেয়ারহোল্ডাররা পাচ্ছেন ৫০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের বোনাস শেয়ার। অর্থাৎ বোনাস এবং নগদ মিলে শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে নগদ লভ্যাংশ পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শেয়ারহোল্ডাররা। কারণ তাদের বোনাস শেয়ারের চেয়ে নগদ লভ্যাংশ বেশি পছন্দের। বিশেষ করে দুর্বল কোম্পানি থেকেই বেশি বোনাস শেয়ার আসতে দেখা যায়। আর এসব কোম্পানির বোনাস শেয়ার চান না বিনিয়োগকারীরা।

জানতে চাইলে শাফায়েত হোসেন বেলাল নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, বাজারে বহুজাতিক কোম্পানিসহ স্বল্প-সংখ্যাক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখান থেকে আমরা বোনাস আশা করি। কিন্তু এসব কোম্পানি থেকে সাধারণত বোনাস শেয়ার দেয়া হয় না। অন্যদিকে যেসব কোম্পানি থেকে বোনাস আশা করা হয় না তারাই বেশি বোনাস শেয়ার দিত। এ বছর নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ে কোম্পানিগুলো নগদ লভ্যাংশ বাড়িয়েছে। এটা ভালো খবর। নগদ লভ্যাংশ পেলে আমরা বেশি উপকৃত হব।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি যদি পরপর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ না দেয় তাহলে সেই কোম্পানির অবস্থান হবে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে। পাশাপাশি এসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যার সুবাদে এ বছর নগদ লভ্যাংশ দেয়ার হার বেড়েছে। সম্প্রতি বিএসইসি থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

বিএসইসি কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো কোম্পানি টানা দুই বছর শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হলে বা লোকসান করলে বা অপারেটিং ক্যাশ-ফ্লো ঋণাত্মক হলে বা এজিএম করতে ব্যর্থ হলে সেটি জেড ক্যাটেগরিভুক্ত হবে। এছাড়া কোম্পানির ব্যবসায়িক বা উৎপাদন কার্যক্রম অন্তত ছয় মাস বন্ধ থাকলে বা পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলেও তা এই ক্যাটেগরিতে চলে যাবে। এর বাইরে বিদ্যমান বিধান ভঙ্গ করলে কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে সেটিকে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে পাঠাতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জ।

অন্যদিকে কোনো কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটেগরিভুক্ত হওয়া মাত্র সেটির সব উদ্যোক্তা ও পরিচালকের শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর, বন্ধক প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা তালিকাভুক্ত অন্য কোনো কোম্পানির পরিচালক বা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন। এসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেবে এবং বিশেষ অডিটের ব্যবস্থা করবে। পুনর্গঠিত পর্ষদ পরবর্তী চার বছরে কোম্পানিকে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে না পারলে তালিকাচ্যুত করবে স্টক এক্সচেঞ্জ। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, কিছু কোম্পানির আছে যারা বছরের পর বছর বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে। এতে তাদের শেয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে শেয়ারের চাহিদা এবং দর উভয়ই কমে যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে দুর্বল কোম্পানিগুলো এ সুবিধা গ্রহণ করে। এসব কোম্পানি থেকে বোনাসের বদলে নগদ লভ্যাংশ পেলে তা বিনিয়োগকারীর জন্য ভালো। বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের কোম্পানি থেকে নগদ লভ্যাংশই প্রত্যাশা করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০