রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ছে না, রিটার্ন বেড়েছে ৬৩ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৩০ নভেম্বর সোমবার জাতীয় আয়কর দিবস। আগামীকাল শেষ হচ্ছে রিটার্ন দাখিলের সময়। করোনার কারণে বিভিন্ন মহল থেকে রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, করোনার প্রকোপ বাড়লেও রিটার্ন দাখিলের হার গতবছরের তুলনায় বেশি। ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল গতবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৩ হাজার বেড়েছে। একইসঙ্গে করোনার কারণে এবছর আয়কর দিবসের র‌্যালী হচ্ছে না। সংক্রমণ এড়াতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলোচনা সভা হবে ভার্চুয়াল। রোববার (২৯ নভেম্বর) সকালে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান এসব তথ্য জানান।

সময় বাড়ানো হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, সময় বাড়ানো হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে যারা আয়কর রিটার্ন দিতে পারবেন না, তারা সংশ্লিষ্ট কর অফিস থেকে সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে পারবেন। তবে ২ শতাংশ জরিমানার বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। গ্রাহক সঠিক সময়ে কেন রিটার্ন জমা দিতে পারেননি, তার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে জরিমানা মওকুফ করা হবে। কমিশনারের কাছে যদি কারণ যৌক্তিক মনে না হয়, তবে জরিমানা গুণতে হবে।

উল্লেখ্য, আয়কর আইন অনুযায়ী, উপকর কমিশনার করদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্ন জমা দিতে দুই মাস সময় দিতে পারেন। তবে করদাতাকে সেই ক্ষেত্রে ২ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়। এ জরিমানা মওকুফের ক্ষমতা কমিশনারের নেই।

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর প্রদান একটি সামাজিক মযা‍র্দার বিষয়। জনগণ সেটা বুঝলে আয়কর বাড়বে। জনসচতেনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা ২০০৮ সাল থেকে আয়কর দিবস পালন এবং ২০১০ সাল থেকে আয়কর মেলা করা হচ্ছে। এবার করোনার কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিয়ষটি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয়ভাবে মেলা করা হয়নি। সেজন্য প্রতিটি কর অঞ্চল এবং সার্কেলে মেলার আবহ তৈরি করা হয়েছে। করদাতারা সেখানে রিটার্ন দাখিল ও সেবা গ্রহণ করছেন। করদাতাদের তেমন কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। কেন্দ্রীয় মেলার চেয়ে কম সময়ে করদাতারা সেবা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, তবে আমরা মেলায় ব্যাংক সার্ভিসটা দিতে পারেনি। তবে সেটার জন্য করদাতাদের কোন অভিযোগ ছিলো না। আমরা এ-চালান (ইলেকট্রনিক চালান) চালু করেছি। করদাতারা ব্যাংকে না গিয়ে যেকোন জায়গা থেকে এ-চালানের মাধ্যমে কর জমা দিতে পারছেন। ৩০ নভেম্বর আমরা আয়কর দিবস পালন করব। এবার জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সচেতনতার বিষয়টি মাথায় রেখে সীমিত পরিসরে এবার আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাজসজ্জা ও অন্যান্য বিষয় এবার পরিহার করা হয়েছে। আয়কর দিবসের র‍্যালী হচ্ছে না। তবে আলোচনা অনুষ্ঠান ক্ষুদ্র পরিসরে হবে এবং বাকিটা ভার্চুয়ালি করা হবে। আয়কর রিটার্ন আরও কীভাবে সহজ করা যায়, সে কাজ চলছে। এ বছর থেকে এক পাতার রিটার্ন করা হয়েছে, যাতে করদাতা সহজে রিটার্ন দিতে পারেন। এবারের আয়কর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘স্বচ্ছ ও আধুনিক করসেবা প্রদানের মাধ্যমে করদাতাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ’।

চেয়ারম্যান বলেন, ই-টিআইনধারী কিন্তু রিটার্ন জমা দেননি, তাদের একটি বিরাট অংশ এবারও মনে করবে যে রিটার্ন জমা না দিলে কিছুই হবে না। নোটিস যাবে, জরিমানা করা হবে। নিয়ম ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, গত বছরের ২৬ নভেম্বরের চেয়ে এ বছরের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন বেড়েছে ৬৩ হাজার ১৯৯টি। তবে একই সময়ে আয়কর কমেছে ১৯৩ কোটি টাকা। এ বছর ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত দাখিল করা রিটার্নের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ২০ হাজার ৮২৫। গতবছর একই সময়ে দাখিল করা আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৬ টি। সে হিসাবে রিটার্ন বেড়েছে ৬৩ হাজার ১৯৯টি। এ বছর ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্নের সঙ্গে কর পরিশোধ হয়েছে ২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। গতবছর একই সময়ে রিটার্নের সঙ্গে কর পরিশোধ হয়েছিল ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। সে হিসাবে কর পরিশোধ কমেছে ১৯৩ কোটি টাকা। সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সদস্য এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় শেষ হচ্ছে সোমবার। দুইদিন ছুটি শেষে রোববার আয়কর অফিসে রিটার্ন জমা নেওয়া হয়। শেষ সময়ে রিটার্ন দাখিলে করদাতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রচন্ড ভিড় ঠেলেও বেশিরভাগ করদাতা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রিটার্ন দাখিল করেছেন। বেশিরভাগ অফিসে করদাতাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সুশৃঙ্খল করতে স্বেচ্চাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট এর সদস্যরা। রিটার্ন দাখিলে করদাতাদের সহায়তা করেছেন কর কর্মকর্তারা। কমিশনার ও এনবিআর সদস্যরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছেন।

বগুড়ার কর কমিশনার স্বপন কুমার রায় শেয়ার বিজকে বলেন, শেষ সময়ে ভিড় বেড়েছে। তবে করদাতাদের মধ্যে শৃঙ্খলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং রিটার্ন দাখিলে সহায়তা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিএনসিসি সদস্যরা সহযোগিতা করেছেন। আমরা সার্বক্ষনিক তদারকি করছি, যাতে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত হয়।

কর অঞ্চল-১২, ঢাকার কমিশনার মো. আবদুল মজিদ শেয়ার বিজকে বলেন, রোববার করদাতাদের প্রচন্ড ভিড় ছিল। শেষ সময়ে বাড়তি সেবা প্রদানে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে। করদাতা থাকা পর্যন্ত রিটার্ন নেওয়া হয়েছে। শেষদিন করদাতা থাকা পর্যন্ত আমরা থাকবো।

কর অঞ্চল-১০, ঢাকার কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম শেয়ার বিজকে বলেন, শেষ সময়ে প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে। যতটুকু সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্মকর্তারা সেবা দিচ্ছেন। আমরা সার্বক্ষনিক সহায়তা ও তদারকি করছি, যাতে কোন করদাতা ভোগান্তির শিকার না হন।

কর অঞ্চল-৫, ঢাকার কমিশনার সোয়ায়েব আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, করদাতার বাড়তি চাপ সামলাতে আমরা ভবনের বাইরে রিটার্ন দাখিল বুথ স্থাপন করেছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রিটার্ন নেওয়া হচ্ছে। শেষ সময়ে ভিড় বাড়ছে। তবে কোন করদাতাকে আমরা ফিরিয়ে দেবো না। আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছি।

###

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০