আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে মাদকাসক্ত বখাটেদের উৎপাত। সমাজসচেতনরা বলেছেন, একই দলের মধ্যে কোনো ব্যক্তিবিশেষের রাজনৈতিক বলয়কে দীর্ঘায়িত করতে সমাজের বখাটেরদের ওপর ভর করছেন তারা। এর ফলে ওই বখাটেরা নিজেদের শক্তিশালী মনে করছেন। একপর্যায়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন তারা। এমনকি এতে কেউ কিছু করতে পারবে না, এমন ধারণাও তৈরি হচ্ছে অনেকের মনে।
জানা গেছে, নোয়াখালী জেলা সদরের ১৩টি ইউনিয়ন ও নোয়াখালী পৌরসভাসহ অনেক এলাকায় কিছু স্থানীয় মাদকাসক্ত ও বখাটে যুবক নানা অপরাধ কর্ম সংঘটিত করে চলছে। উত্ত্যক্ত করা, মাদক ও ইয়াবা সেবন, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই থেকে শুরু করে গুরুতর অপরাধেও নাম জড়াচ্ছে তাদের। অনেক মাদকসেবী আবার বেকারত্বের অজুহাতে রাস্তাঘাটে বসে দিনরাত আড্ডায় মেতে উঠছে বলেও জানা গেছে।
সরেজমিনে নোয়াখালী পৌরসভাসহ সদরের কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় গ্রাম্য দোকানপাটে বসে আড্ডাবাজি করে বখাটে ও মাদকাসক্তরা। পথচারী নারী-পুরুষকে উত্ত্যক্ত এবং মেয়েদের ইভটিজিং করা থেকে শুরু করে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে তারা। এ নিয়ে স্থানীয় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুর এলাকার স্কুলশিক্ষক রাশেদুল হাসান বলেন, ‘এলাকার কিছু বখাটে ও মাদকাসক্ত যুবক পথচারীদের মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকাপয়সা ছিনতাই করে নিচ্ছে। কলেজ ও বিদ্যালয়গামী মেয়েদের দেখলে নানাভাবে বিভিন্ন কায়দায় কথা বলে। এ নিয়ে এলাকার শিক্ষিত সমাজ চরম বেকায়দায় রয়েছে।’
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ছাত্র সাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘এলাকায় কিছু ছেলের মাধ্যমে ইয়াবা সেবন করে ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষিত যুব-ছাত্রসমাজ। দিনরাত কিছু বখাটে ছেলের উম্মাদনায় এলাকাবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতাদের সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি, এলাকার সুন্দর একটি মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে প্রশাসনের সহযোগিতায় এলাকাটি মাদকমুক্ত করুন।’
নোয়াখালী পৌরসভার উত্তর সোনাপুরের প্রবাসী জসিম মিয়া জানান, এ এলাকায় উঠতি বয়সের অসংখ্য যুবক মাদকাসক্তে সম্পৃক্ত হয়ে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা সেবন, ইভটিজিং, চুরি ও ডাকাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এসবের জন্য মা-বাবাসহ আরও অনেকের দায় আছে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে নোয়াখালী পৌরসভার একজন কাউন্সিলর নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা এলাকায় বখাটে যুবকদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখুন। প্রয়োজনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়ে মাঠে কাজ করুন। এতে এলাকায় মাদকাসক্ত ও ইভটিজার কমে যাবে।’
জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘এলাকায় কিছু মাদক ব্যবসায়ী আছেন। তাদের কারণে এই এলাকায় কিছু যুবক মাদকাসক্ত হচ্ছে। বড় মাদক ব্যবসায়ীদের থামাতে পারলে পরিবেশবান্ধব একটি এলাকা হবে এটি।’
এ ব্যাপারে সুধারাম থানার ওসি মো. সাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘সঠিক তথ্য ও লিখিত অভিযোগ পেলে থানার পুলিশ সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
আর জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকার পরিবেশ ভালো রাখতে পুলিশ সব সময় সজাগ রয়েছে। বখাটে ও মাদক সেবনকারীদের তথ্য দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’