অনিয়মের অভিযোগে যশোরে ২৫ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: নানা অনিয়মের অভিযোগে যশোর জেলায় ২৫টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, সেবিকা, প্যাথলজি টেকনিশিয়ান, চিকিৎসা উপকরণ ও সরকারি নিবন্ধন না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তবে বন্ধ করে দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি গোপনে চিকিৎসাসেবার কাজ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সেগুলো আবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

যশোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ১৭৮টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ১১০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সর্বমোট ২৮৮টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ২০০টি প্রতিষ্ঠানে সিভিল সার্জনের পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে। শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণে ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক এবং পাঁচটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে ২৪ ঘণ্টা মেডিকেল অফিসার ও সেবিকা নেই। নেই প্যাথলজি টেকনিশিয়ান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণ। তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় ভবন অবকাঠামো নেই।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে লাভজনক ব্যবসা করার জন্য যত্রতত্র গড়ে তোলা হয়েছে চিকিৎসাসেবার নামে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। টাকা থাকলেই প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ব্যবসা করা যায়, এমন ধ্যান-ধারণার আলোকে স্বাস্থ্যজ্ঞানহীন নানা ধরনের ব্যবসায়ী এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যশোর শহরের কয়েকটি নামিদামি মেডিকেল সার্ভিস ও বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া অনেক বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে চলছে এ ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবসা, যেখানে ক্লিনিক মালিকরা চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দেন, রোগীর সিজার করেন। কর্মচারীরা সেখানে চিকিৎসক হয়ে উঠেছেন। নানারকম প্রতারণার মাধ্যমে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে তারা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ পরিস্থিতি থেকে জনগণকে রক্ষা এবং চিকিৎসাসেবার সঠিক নিশ্চয়তা পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া নির্দেশ দেয়া হয় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে নতুন করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শর্ত পূরণ করলে তাদের আবার লাইসেন্স দেয়া হবে। ২০১৮-১৯ সালে এ নির্দেশ দেয়া হলেও সে সময় কর্তব্যরত সিভিল সার্জনের উদাসীনতার কারণে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরিদর্শন করা হয়নি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অথচ লাইসেন্স দেয়ার নামে সে সময় সিভিল সার্জন অফিসে অনেক দেনদরবার হয়েছে।

সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় গত জুন থেকে শুরু হয় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনের কাজ, যা এখনও চলমান রয়েছে।

যশোরে বন্ধ করে দেয়া বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মধ্যে রয়েছেÑশহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের এএফসি ফোর্টিস, মিড পয়েন্ট, জেল রোডের মাতৃসেবা ক্লিনিক, সদর উপজেলার রূপদিয়া মহুয়া ক্লিনিক, এএফসি হেলথ ফরটিস আউটরিচ ক্লিনিক, বাঘারপাড়ায় মহিরন মা ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মরিয়ম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আনোয়ারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কেশবপুর মহাকবি মাইকেল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শার্শার নাভারন রেলবাজার, জোহরা ক্লিনিক, বাগআঁচড়া, মামণি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঝিকরগাছায় আনিকা ক্লিনিক, আবিদ ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এসএ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, মণিরামপুরে গলদাবাজার ফাতেমা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মনিরামপুর হাসপাতাল গেট জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, বাঁকড়া বাজার কপোতাক্ষ সার্জিক্যাল ক্লিনিক, রিজু হাসপাতাল, রাজগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পারবাজার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড কনসালটেশন, ল্যাবসাদ, মুন হাসপাতাল, অভয়নগর ফয়সাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চৌগাছা হাসপাতাল রোডের ডক্টরস প্যাথলজি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০