পলাশ শরিফ: প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও জনবল সংকটে রয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। নীতিমালা না থাকায় জনবল কাঠামো অনুমোদনের ১০ মাসেও নিয়োগ দিতে পারেনি সংস্থাটি। অন্যদিকে প্রায় পাঁচ বছর আগে এ-সংক্রান্ত প্রবিধানের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু কর্মরতদের ‘আত্তীকরণ’ নিয়ে জটিলতায় প্রক্রিয়াটি শেষ ধাপে এসে আটকে গেছে। সংস্থাটির শীর্ষ পদে রদবদলের পর এ বিষয়ে তৎপর হয়েছে আইডিআরএ। জনবল সংক্রান্ত প্রবিধান প্রণয়নের জন্য আবারও কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। প্রবিধানের নতুন খসড়ায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণের বিষয়টিও যুক্ত করা হতে পারে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১২ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় জনবল কাঠামো প্রাথমিক অনুমোদনের পর ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী’ সংক্রান্ত প্রবিধান তৈরির উদ্যোগ নেয় আইডিআরএ। কিন্তু চার-পাঁচ বছরেও ওই প্রবিধান চূড়ান্ত হয়নি। আর ওই প্রবিধান না হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি আইডিআরএ। গত বছরের মাঝামাঝিতে জনবল কাঠামো অনুমোদনের পর এ-সংক্রান্ত প্রবিধান চূড়ান্ত করতে তোড়জোড় শুরু করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু কর্মরতদের ‘আত্তীকরণ’ ইস্যুতে তৎকালীন চেয়ারম্যানের সঙ্গে সদস্যদের মতবিরোধের কারণে সে উদ্যোগ থমকে গেছে। চলতি মাসের শুরুতে সাবেক ওই চেয়ারম্যান দায়িত্ব ছাড়ার পর চলতি দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান গোকুল চাঁদ দাস জনবল নিয়োগে তৎপর হয়েছেন। সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিমা খাতের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও করেছেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রবিধান প্রণয়ন বিষয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করেছে আইডিআরএ। এ কমিটি একটি সময়োপযোগী প্রবিধান প্রণয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করবে। অন্যদিকে ছয় বছর ধরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণের বিষয়টি খসড়া প্রবিধানে সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও তথ্য মিলেছে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) গোকুল চাঁদ দাস এ বিষয়ে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জনবল কাঠামো অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা মেনে জনবল নিয়োগের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। তাই অর্থ মন্ত্রণালয় প্রবিধান প্রণয়নে কাজ করছে। এ বিষয়ে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকেও একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি প্রবিধানের খসড়া প্রণয়নে কাজ করছে।’
তথ্যানুসন্ধানে মিলেছে, ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি আইডিআরএ’র পথচলা শুরুর পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিতে ১৭টি পদের বিপরীতে ১৯৫ জনবল নিয়োগে সম্মতি দেয় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। জনবল কাঠামো চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইডিআরএ। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রায় তিন বছর পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জনবল সংখ্যা কমিয়ে ১৭ পদে ১৫৫ জনকে নিয়োগের অনুমতি দেয়। বিদ্যমান জনবল সংকটের মধ্যেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আমলে নেয়নি সংস্থাটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ অ্যাকচুয়ারি। বিষয়টি ‘পুনর্বিবেচনা’র জন্য ওই বছরের ১০ মে তার দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ঝুলে যায়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩০ জুন পদ ও জনবলের সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখেই আইডিআরএ’র ‘সাংগঠনিক কাঠামো’ অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণ ইস্যুতে জটিলতার কারণে এ-সংক্রান্ত প্রবিধান প্রণয়নের কাজ আটকে যায়। তাই জনবল কাঠামো পেলেও জনবল পায়নি সংস্থাটি।
এ বিষয়ে গঠিত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ছয় বছর ধরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ এতদিন উপেক্ষিত ছিল। যে কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়েছেন। কর্মরতরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন। অবশেষে আত্তীকরণের বিষয়টি নতুন প্রবিধানের খসড়ায় যুক্ত করা নিঃসন্দেহে ভালো একটি উদ্যোগ। কমিটি নতুন খসড়া প্রবিধান প্রণয়নে কাজ করছে। এর আগের খসড়া প্রবিধান পর্যালোচনা ও সংযোজন-বিয়োজন শেষে নতুন খসড়া তৈরি করা হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ এনে তৎকালীন বিমা অধিদফতরকে বিলুপ্ত করে ‘বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’ নামে নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া জনবল দিয়ে সংস্থাটির কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে সংস্থাটির বিভিন্ন পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। চাকরি স্থায়ী করা নিয়ে ক’বছর ধরে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। অন্যদিকে জনবল না পেয়ে ছয় বছরেও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
Add Comment