প্রয়োজন ছাড়া ভাসানচরে যেতে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রয়োজন ছাড়া ভাসানচরে উৎসুক জনতা যেতে পারবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রোহিঙ্গা সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা-সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রথম সভা শেষে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, মুখ্য সচিব, সেনাবাহিনীর পিএসও, জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সচিব, আইজিপিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি উৎসুক জনতা নোয়াখালী থেকে ভাসানচরে যাতায়াত শুরু করেছে। এটি আপনাদের মাধ্যমে (সাংবাদিক) জানাতে চাই, উৎসুক জনতা যাতে ভাসানচরে যাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকে। যদি কোনো প্রয়োজন হয় তারাই যাবে। আর প্রয়োজন ছাড়া যেন ভাসানচরে উৎসুক জনতা গিয়ে ওখানে আরেকটা সমস্যা তৈরি না করে, সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের সম্মতিতেই ভাসানচরে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কাউকে জোর করে সেখানে নেয়া হয়নি। আজকের সভায় মিয়ানমারে সংগঠিত অভ্যন্তরীণ দাঙ্গার কারণে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, তারা কী অবস্থায় আছে, তারা কীভাবে যাবেÑসবকিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পগুলোর চারদিকে একটা কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করার কথা আগেই বলেছিলাম, যাতে ক্যাম্পে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিকরা যত্রতত্র যেতে না পারে এবং তারা যেন এক জায়গায় থাকতে পারে। পাশাপাশি অন্যরকম কোনো পরিস্থিতিতে না পড়ে, সেজন্যই কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন আমরা কাঁটাতারের বেড়া নয়, চারদিকে একটা ওয়াকওয়ে ও টাওয়ার থাকবে। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে, যাতে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা যায়। এই কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য এই সভায় নিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কাজটি আমাদের সেনাবাহিনী সুসম্পন্ন করবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য দুটি ক্যাম্প ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনে বিজিবি ও র?্যাবের সহযোগিতা নেবে। পাশাপাশি সেখানে আউটসাইডে সেনাবাহিনীর যে ক্যাম্প সেটা থাকবে। তারা আউটসাইডে রোহিঙ্গাদের যেভাবে টহল দিচ্ছে, সেভাবে দেবে। কিন্তু পুরো নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে পুলিশের ওপর।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক কারবার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পগুলোয় যারা অবস্থান করছেন, তারা মাঝেমাঝেই মিয়ানমারে চলে যাচ্ছেন। সেখানে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য ইয়াবা নিয়ে আসেন। সেটার লাভ-লোকসানের ভাগাভাগি নিয়ে মাঝে মাঝে কলহ হয়, আমাদের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে। সেই কলহের জের ধরে আমরা শুনেছি খুনোখুনিও হচ্ছে, দুই-চারটি খুনও হয়েছে। কিছু নতুন বাহিনীও তৈরি হয়েছে। এটা যাতে না বাড়ে তাই রাতে ও দিনে পুলিশের টহল অব্যাহত থাকবে।

গত ১৪ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা-সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে গেজেট জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে ১৭ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেনÑপররাষ্টমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবকে কমিটিতে সদস্য করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑপুলিশ মহাপরিদর্শক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক, সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০