নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি করতেই সরকার ভ্যাকসিন আমদানিতে ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভ্যাকসিন সরকার সরাসরি না কিনে মধ্যস্বত্ব¡ভোগী নিয়োগ দিয়েছে দুর্নীতির জন্য। এর মাধ্যমে জনগণের অর্থ নয়-ছয় করে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। সরকারি সুবিধাভোগী পদবিধারী মধ্যস্বত্বভোগী নিয়োগ নিয়ে নীতিগতভাবেই শুধু নয়, আইনগতভাবেও অপরাধমূলক কাজ হয়েছে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, সরকারের লাভজনক পদে নিয়োগকৃত কোনো ব্যক্তি, যিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, তার এই (ভ্যাকসিন ক্রয়) সম্পৃক্ততা বেআইনি ও অপরাধমূলক।’
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে সরকার চুক্তি করেছে বাংলাদেশের খ্যাতনামা ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন আমদানি প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ফলে জনগণের এই টিকাপ্রাপ্তি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ভ্যাকসিন করে আসবে, এটা নিয়ে গোটা জাতির সঙ্গে আমরাও চরমভাবে উদ্বিগ্ন। এখন পর্যন্ত তারা (সরকার) কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ও নির্ধারণ করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘ভারত থেকেও কোনো নিশ্চয়তা এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। কারণ ভারতের হাইকমিশনার বলেছেন, ভারতের চাহিদা মেটানো হবে, তারপর তারা (কোন কোন দেশকে দেয়া হবে) নির্ধারণ করবেন। তাদের পররাষ্ট্র সচিবও একই কথা বলছেন। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তারা চুক্তি করেছে যে, শ্রীলঙ্কাকে তারা অগ্রাধিকার দেবে। এই বিষয়গুলো অস্পষ্ট এবং পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের মানুষকে আবার প্রতারণার শিকার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনটা হচ্ছে জীবন রক্ষা করার একটা বিষয়। এটা একটা অগ্রাধিকার। সেই ভ্যাকসিন নিয়েও তারা দুর্নীতি করছে, যেটা আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি।’
টিকা আমদানির দায়িত্ব ‘বিতর্কিত’ বেক্সিমকো গ্রুপকে দেয়ার সিদ্ধান্তে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বলে জানান ফখরুল। শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির এই ভার্চুয়াল সভা হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের আশু রোগমুক্তির কামনায় দেশবাসীর কাছে সভায় দোয়া চাওয়া হয়েছে বলেও জানান মহাসচিব। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সমালোচনা করে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা দিয়ে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী যে চিত্র, সেটাই প্রকাশিত হয়েছে। কারণ একজন বর্তমান মেয়র, আরেকজন সাবেক মেয়র। বর্তমান মেয়র অভিযোগ করছেন, সাবেক মেয়র দুর্নীতি করেছেন। তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে যে, আগে দুর্নীতি কী হয়েছে? যারা এখন আছেন, তারা কী করছেন সেটাও আমরা পত্রপত্রিকায় দেখতে পারছি। সুতরাং বর্তমানে দেশে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী যে চিত্র, সেটাই বেরিয়ে এসেছে।’ সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।