## ডিসেম্বর মাসে রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় ৮৭ হাজার, রিটার্ন দাখিল হার ৪০%
## রিটার্ন দাখিলে দ্বিতীয় যশোর, তৃতীয় রংপুর, চতুথ সিলেট কমিশনারেট
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিনিয়তই বাড়ছে অনলাইনে নিবন্ধন ও ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের হার। আর সচেতনতা বাড়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের দিকে ঝুঁকছে। ভ্যাট নিবন্ধন ও অনলাইনে রিটার্ন জমার হার বাড়াতে কমিশনারেটগুলোতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সে অনুযায়ী ডিসেম্বর মধ্যে অনলাইন রিটার্ন দাখিলে পঞ্চমবারের মতো র্শীষস্থান ধরে রেখেছে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট।
বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর মাসে ১২টি কমিশনারেটে যেখানে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের হার প্রায় ৪০ শতাংশ। সেখানে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের হার ৯৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে রিটার্ন দাখিলে দ্বিতীয় অবস্থানে যশোর আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রংপুর কমিশনারেট। অবস্থান ধরে রাখা ও র্শীষ অবস্থানে আসতে সব কমিশনারেট প্রতিযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

অপরদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ব্রত নিয়েই মাঠে সক্রিয় এ কমিশনারেটের (সিইভিসি) টিম। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সক্রিয়তার মাধ্যমেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এছাড়া মুজিববর্ষে রাজস্ব আদায়ে সকল সূচকে সর্বোচ্চ কৃতিত্ব অর্জনে কমিশনারেটগুলোকে নির্দেশনা দেয় এনবিআর চেয়ারম্যান। সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট র্শীষস্থান ধরে রেখেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট সূত্র জানায়, এ কমিশনারেটের আওতাধীন রিটার্ন দাখিলযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬১২। এরমধ্যে ডিসেম্বর মাসে ম্যানুয়ালি রিটার্ন দাখিল করেছে ৩৫টি, অনলাইনে ৯ হাজার ৭৫টি। ডিসেম্বর মাসে মোট রিটার্ন দাখিল করেছে ৯ হাজার ১১০টি প্রতিষ্ঠান। নিবন্ধনের তুলনায় রিটার্ন দাখিলের হার ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর মোট রিটার্নের তুলনায় অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের হার ৯৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এনবিআর সূত্র জানায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধিত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই লাখ ৩০ হাজার ৭৮৬টি। এরমধ্যে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৮৬ হাজার ২৮৬টি। নিবন্ধনের তুলনায় রিটার্ন দাখিলের হার প্রায় ৪০ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে টানা পঞ্চমবার প্রথম স্থানে রয়েছে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ৯ হাজার ৬১২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯ হাজার ৭৫টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছে। রিটার্ন দাখিলের হার ৯৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটের ১৩ হাজার ৮০৪টি নিবন্ধিত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছে ১২ হাজার ৫৮৬টি; রিটার্ন দাখিলের হার ৯১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রংপুর ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটের নিবন্ধিত ১০ হাজার ১১৫টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৮ হাজার ১২৭টি। রিটার্ন দাখিলের হার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সিলেট ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটের নিবন্ধিত ৯ হাজার ৩৩০টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৬ হাজার ৯২১টি। রিটার্ন দাখিলের হার ৭৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। এখানে নিবন্ধিত ১৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৮টি প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দাখিল করেছে; রিটার্ন দাখিলের হার ৬১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটের নিবন্ধিত ২৭ হাজার ৪২১টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ১৫ হাজার ৪০৯টি; রিটার্ন দাখিলের হার ৫৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সপ্তম অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটের নিবন্ধিত ১৪ হাজার ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬ হাজার ৩১৫টি রিটার্ন দাখিল করেছে, রিটার্ন দাখিলের হার ৪৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অষ্টম অবস্থানে খুলনা ভ্যাট কমিশনারেটে নিবন্ধিত ১৫ হাজার ৫০৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৬ হাজার ৩০৫টি; রিটার্ন দাখিলের হার ৪০ দশমিক ৮০ শতাংশ। নবম অবস্থানে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ১৫ হাজার ৫০৭ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৪ হাজার ৮২৫টি; রিটার্ন দাখিলের হার ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ।
ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট দশম অবস্থানে। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ২৬ হাজার ৪৬২টির মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৬ হাজার ৬৯৫টি; রিটার্ন দাখিলের হার ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। একাদশ অবস্থানে ঢাকা উত্তর কমিশনারেটে নিবন্ধিত ৩২ হাজার ৪০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৩ হাজার ৯৬০টি; রিটার্ন দাখিলের হার ১২ দশমিক ২২ শতাংশ। দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ৫৬ হাজার ৩০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৬ হাজার ১৬৬টি; রিটার্ন দাখিলের হার ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

অপরদিকে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রমতে, ১৫ জুলাই বর্তমান কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী যোগদানের এক মাসের মাথায় এ কমিশনারেট অনলাইন রিটার্ন জমায় পঞ্চম স্থান থেকে প্রথম স্থানে উঠে আসে। পরবর্তীকালে এ কমিশনারেটের অনলাইন রিটার্ন দাখিলের চিত্র পাল্টে যায়। জুলাইয়ে রিটার্ন দাখিলের হার ছিল ৫১ শতাংশ। এ কমিশনারেটের ছয়টি জেলায় করদাতাদের ফোন, প্রতিষ্ঠানের তদারকি বাড়ানো হয়। ‘রিটার্ন ওয়ানস্টপ কাউন্টার’ গঠন করা হয়। কুমিল্লা ভ্যাট টিম নিরন্তর ও ক্লান্তিহীন কাজ শুরু করেন। এছাড়া কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ায় এ কমিশনারেটে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের চিত্র পাল্টে গেছে। একইভাবে টানা পঞ্চমবার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে এ কমিশনারেট।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে-সার্কেল অফিস থেকে জেলায়, থানায় করদাতাদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ; রিটার্ন দেয়নি এমন করদাতাদের কাছে মোবাইলে বাল্ক এসএমএস প্রেরণ; স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় এবং স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরের মাধমে প্রচারণা; কর্মকর্তাদের রিটার্ন জমায় প্রশিক্ষণ; স্থানীয় মার্কেট ও লোকালয়ে মাইকিং করে প্রচারণা; ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসায় সশরীরে গিয়ে করদাতাগণকে কাউন্সিলিং; শীর্ষ করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সৌজন্য উপহার সামগ্রী প্রদান; রিটার্ন জমা ও করদাতা সচেতনতায় ফেসবুক গ্রুপে ব্যাপক প্রচারণা; করদাতাদের রিটার্ন জমার সুবিধার জন্য শুক্র ও শনিবার অফিস খোলা রাখা; কর্মকর্তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সময়ে সময়ে পুরস্কার দেয়া; প্রতিটি বিভাগ এবং সার্কেলে প্রতিদিনের কাজ সদর দপ্তর থেকে মনিটরিং ইত্যাদি।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, রিটার্ন দাখিলের প্রথম স্থান অর্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। একটা ভালো ‘টিমওয়ার্ক’ এর মাধ্যমে এ অর্জন। স্বীকৃতি কাজের প্রণোদনা বৃদ্ধি করে। কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছেন। আমরা প্রকৃত কর্মীদের স্বীকৃতি দানের চেষ্টা করছি। গত পাঁচ মাসের মতো ভবিষ্যতেও রিটার্ন দাখিলের ধারা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল হাকিম বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও সাহস ও উদ্যম নিয়ে কর্মকর্তা- কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়, অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের কাজ করে যাচ্ছেন। কুমিল্লা টিম এ চ্যালেঞ্জকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছে।
এ বিষয়ে কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাফল্য অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। কুমিল্লার কর্মপ্রবণ টিম এনবিআরের সম্মানও উচ্চকিত করেছে। করোনাকালে কুমিল্লা টিমের জন্য বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জের ছিল। দলবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক। দেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ কর্মকর্তাদের পরিশ্রম ও সাফল্যের পিপাসা কুমিল্লা কমিশনারেটকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও রিটার্ন দাখিলে উপর্যুপরি সাফল্য এনে দিয়েছে।
###